পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নববিধান V তা হলেই হয়েচে আর কি। আপনাদের সমাজে ওকে একঘরে ক’রে দেবে । ক্ষেত্রমোহন কহিলেন, তা দিক বৌঠাকরুণ। কিন্তু ওরা স্বামীস্ত্রীতে যে পৰম সুখে থাকবে তা বাজি রেখে বলতে পারি। শৈলেশ বিভার প্রতি একবাব কটাক্ষে চাহিয়া ঠাট্টা করিয়া কহিল, বাজি রাখতে আর হবে না ভাই, এই বলতেই যথেষ্ট হবে । ক্ষেত্রমোহন জবাব দিয়া বলিলেন আর যাই হোক, আজকের কাজটুকুও যদি মনে রাখতে পারে ত নিরর্থক নিত্য নূতন মোজা কেনার দায় থেকেও অন্ততঃ ওর স্বামী বেচারা অব্যাহতি পাবে । বিভা সেই অবধি চুপ করিয়াই ছিল, কিন্তু আর পারিল না ’ । কিছু গুঢ় ক্রোধের চিহ্ন গোপন করিয়া একটুখানি হাসিবার প্রয়াস করিয়া বলিল, ওর ভবিষ্যৎ সংসারে হয়ত মোজায় তালি দেবার প্রয়োজন নাও হতে পারে। দিলেও হয়ত ওর স্বামী পরতে চাইবে না। আগে থেকে বলা কিছুই যায় না। ক্ষেত্ৰমোহন কহিলেন, যায় বইকি, চোখ খোলা থাকলেই বলা যায়। যে সত্যিকার জাহাজ চালায়, সে জলের চেহারা দেখলেই টের পায় তলা কত দূরে। বৌঠাকরুণ জাহাজে পা দিয়েই যে ধরে ফেলেছিলেন একটু অসাবধানেই তলার পাক ঘুলিয়ে উঠবে, এতেই আপনাকে সহস্র ধন্যবাদ দিই। আর শৈলেশের পক্ষ থেকে ত লক্ষ-কোটি ধন্যবাদেও পৰ্য্যাপ্ত হবার নয়। উষা অত্যন্ত লজ্জা পাইয়া সবিনয়ে বলিল, নিজের গৃহে নিজের স্বামীর অবস্থা বোঝবার চেষ্টা করার মধ্যে ধন্যবাদের ত কিছুই নেই, ক্ষেত্রমোহনবাবু। এ-কথার জবাব দিল বিভা । সে কহিল, অন্ততঃ নিজের স্ত্রীকে অপমান করার কাজটা হয়ত সিদ্ধ হয়। তা ছাড়া কাউকে উৎবৃত্তি করতে দেখলেই বোধ হয় কারুর ভক্তি-শ্রদ্ধ উথলে ওঠে।