নববিধান wer সোমেন পাশেই ঘুমাইতেছিল। এ-বাটীতে আর কোন স্ত্রীলোক না থাকায়, আসিয়া পৰ্যন্ত উষা, তাহাকে নিজের কাছে লইয়া শয়ন করিত । তাহার নিদ্রিত ললাটের উপর সে সস্নেহে ও সন্তৰ্পণে বাম হাতখানি রাখিয়া ধীরে ধীরে কহিল, যাই কেন-না স্থির কর, ছেলের কল্যাণের জন্যই তুমি স্থির করবে। এ-ছাড়া আর কিছু কি কেউ কখনও ভাবতে পারে ? বেশ ত, তাই তুমি ক’রে । ইলেকট্রিক আলোগুলি নিবাইয়া দিয়া ঘরের কোণে মিটমিট করিয়া একটা তেলের প্রদীপ জ্বলিতেছিল ; সেই সামান্য আলোকে শৈলেশ নিজের বিছানায় উঠিয়া বসিয়া অদূরবতী শয্যায় শায়িত উযাব মুখের দিকে চাহিয়া দেখিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, তা ছাড়া সে সোমেনের সমস্ত পড়ার খরচ দেবে বলেচে । সে ত কম। নয় ! উষার কণ্ঠস্বরে কিছুতেই উত্তেজনা প্ৰকাশ পাইত না, শান্তভাবে কথা কহাই তাহার প্রকৃতি । কহিল, না, সে হতে পারবে না । ছেলে মানুষ করবার খরচ দিতে আমি তাকে দিতে পারব না । শৈলেশ কহিল, সে যে অনেক টাকার দরকার । উষা তেমনি শান্তকণ্ঠে বলিল, দরকার হয় দিতে হবে । কিন্তু আর রাত জেগো না, তুমি ঘুমোও । পরদিন অপরাহুকালে শৈলেশ কলেজ ও ক্লাব হইতে বাড়ী ফিরিয়া রান্নার একপ্রকার সুপরিচিত ও সুপ্রিয় গন্ধের ভ্ৰাণ পাইয়া বিস্মিত ও পুলকিত-চিত্তে তাহার পড়ার ঘরে প্রবেশ করিল। অনতিকাল পাবে চা ও খাবার লইয়া যে ব্যক্তি দর্শন দিলেন, শৈলেশ মুখ তুলিয়া চাহিয়া দেখিল সে মুসলমান । রাত্রে খাবার-ঘরে আলো জ্বলিল, এবং সাজিত টেবিলের চেহারা দেখিয়া শৈলেশ মনে মনে অস্বীকার করিতে পারিল না যে, ইহারই জন্য অত্যন্ত সঙ্গোপনে মন তাহার সত্যই ব্যগ্র এবং ব্যাকুল হইয়া ऎछेझिञ्छिव् ।
পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৩
অবয়ব