विक्षांन्न ক্ষেত্রমোহন বিস্ময়ে বাকুশূন্য হইয়া চাহিয়া রহিলেন। শৈলেশ লাজুক ও দুর্বল-স্বভাবের লোক, ভয়ঙ্কর কিছু উচ্চারণ করা তাহার একান্তই প্ৰকৃতিবিরুদ্ধ। কিন্তু উন্মাদের মত সে এ কি করিতেছে। উষার ছোট ভাই লইতে আসিয়াছে এ-সংবাদ তিনি ইতিপূর্বেই পাইয়াছিলেন, অতএব অপরিচিত লোকটি যে সে-ই, তাহাতে সন্দেহ নাই,-তাবই সম্মুখে এ-সব কি ! ক্ষেত্রমোহন ব্যগ্র-অনুনয়ে হাতদুটি প্ৰায় জোড় করিয়াই বলিয়া উঠিলেন, দেখবেন, আপনার দিদিকে যেন এ-সব ঘুৰ্ণাগ্রেও জানাবেন না । অপরিচিত ছেলেটি দ্বারের প্রতি অঙ্গুলি-নিৰ্দেশ করিয়া ঘাড় নাড়িয়া কহিল, আমাকে কিছুই জানাতে হবে না, বাইরে দাড়িয়ে দিদি নিজের কাণেই সমস্ত শুনতে পাচ্ছে । বাইরে দাড়িয়ে ? ওইখানে ? প্ৰত্যুত্তরে ছেলেটির জবাব দিবার পূর্বেই শৈলেশ স্পষ্ট করিয়া বলিল, হঁ, আমি জানি ক্ষেত্র, তিনি ওইখানে দাড়িয়ে । উত্তর শুনিয়া ক্ষেত্ৰমোহন স্তব্ধ বিবৰ্ণ হইয়া বসিয়া রহিলেন । সেইদিন ঘণ্টা দুই-তিন পরে ভগিনীকে লইয়া যখন অবিনাশ ষ্টেশন অভিমুখে রওনা হইল, তখন সোমেন তাহার পিসীর বাড়ীতে, তাহার পিতা কলেজ-গৃহে এবং ক্ষেত্রমোহন হাইকোর্টের বারলাইব্রেরীতে বসিয়া । পরদিন সকালে চায়ের টেবিলে বসিয়া বিভা স্বামীকে কটাক্ষ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, দাদা কি কারচেন দেখলে ? ক্ষেত্রমোহন কহিলেন, দেখলুম ত হাতে আছে একখানা বই, কিন্তু আসলে কি কারচেন, বোধ করি অনুশোচনা । এ-কাজটা তুমি কবে করবে ? কোনটা ? বই, না অনুশোচনা । বিভা কহিল, বই তোমার হাতে আর মানাবে না, আমি শেষের কাজটাই বলচি ।
পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০
অবয়ব