পাতা:নব্য রাসায়নী বিদ্যা ও তাহার উৎপত্তি - প্রফুল্লচন্দ্র রায়.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৬১
নব্য রাসায়নী বিদ্যা ও তাহার উৎপত্তি
৬১

ও তাহার উৎপত্তি। করিয়া গিয়াছেন। বৈজ্ঞানিকগণ এখন যেরূপ প্রমাণ লইয়া উপস্থিত, তাহাতে পরমাণুকে আর অবিভাজ্য অণু বলা চলে না। প্রত্যেক পরমাণু, কতকগুলি বৈদ্যুতিক অণুর (electron) সমষ্টি। এই সকল বৈদ্যুতিক অণু পরিমাণে উজান বায়ুর পরমাণুর একের এক হাজার ভাগ মাত্র ১০০০ এবং বিয়ােগসংজ্ঞক (negative) বৈদ্যুতিক শক্তিপূর্ণ। পরমাণু কেহই কখন চর্মচক্ষে বা যন্ত্রসাহায্যে দর্শন করিতে পারেন নাই, সুতরাং বৈদ্যুতিক অণু দর্শনের আশা সুদূরপরাহত বা একবারেই অসম্ভব। কিন্তু যে সব প্রমাণপরম্পরা দ্বারা বৈজ্ঞানিকগণ বৈদ্যুতিক অণুর সত্তা উপলব্ধি করিয়াছেন, সেগুলি ইউক্লিডপ্রণীত জ্যামিতির যুক্তির ন্যায় অখণ্ডনীয়। যাহারা রীতিমত বৈজ্ঞানিক প্রতিভায় দীক্ষিত নন, তাহারা হয় ত পূর্বোক্ত কথা লইয়া উপহাস করিতে বসিবেন। তাহারা বিজ্ঞজনােচিত গাম্ভীৰ্য্য সহকারে বলিবেন, “এই ত তােমাদের বিজ্ঞান : আজ যাহা ঠিক, কাল তাহা বেঠিক। ও সব লইয়া কেন মিছে বকাবকি কর?" পরমাণুবাদ কিয়দংশে ভ্রমাত্মক হইলেও, ইহা দ্বারা কোন উপকার হয় নাই বলা বাতুলতা মাত্র। সভ্য সমাজে আজ কাল শয়নে, অশনে, বসনে, রসায়নের সাহায্য ভিন্ন একদণ্ড চলে না। ডালটনের পরমাণুগুলি থাক বা নাই থাক, কুইনাই, কোকেন, ফেনসেটি প্রভৃতি মহামুল্য ঔষধগুলির রােগসংহারক ধৰ্ম্ম লুপ্ত হইবে না; হরিৎ, কপিল, পীত, লােহিত প্রভৃতি বিচিত্র কৃত্রিমবর্ণগুলি কয় জাজ্বল্যমান দেখাইবে না, শর্করার মিষ্টত্ব, লবণের লবণ, লৌহের ভার- সহত্ব, স্বর্ণের ঔজ্জ্বল্য, মানবমানসক্ষেত্রে পরমাণুর অস্তিত্ব লােপের সহিত, অন্তর্হিত হইবে না। পরমাণুবাদ একশত বৎসর পূর্বে স্থাপিত না হইলে, উনবিংশ শতাব্দীতে রসায়নের এতটা উন্নতি যে সম্ভবপর হইত