পাতা:নানা-কথা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গভাষা বনাম বাবু বাঙ্গলা। 88. স্বদেশীভাষাকে যেরূপ বয়কট করে আসছি, সেই বয়কটও আমাদের ছাড়তে হবে। বহুসংখ্যক শব্দকে ইতর বলে সাহিত্য হতে “বহিষ্করণ”-এর কোনই বৈধ কারণ নেই। মৌখিক ভাষার মধ্যেই সাধু এবং ইতার, উভয় প্রকারেরই শব্দ আছে। যে বাক্য ইতর বলে আমরা মুখে আনতে সঙ্কুচিত হই, তা আমরা কলমের মুখ দিয়েও বার করতে পারি নে। কিন্তু যে সকল কথা আমরা ভদ্রসমাজে নিত্য ব্যবহার করি, যা কোন হিসেবেই ইতর বলে গণ্য নয়, সেই সকল বাক্যকে সাহিত্য থেকে বহির্ভূত করে রাখায় ক্ষতি শুধু সাহিত্যের। কেন যে, পদ-বিশেষ ইত্যর শ্রেণীভুক্ত হয়, সে আলোচনার স্থান এ প্ৰবন্ধে নেই। তবে এ কথা নিৰ্ভয়ে বলা যেতে পারে যে ভদ্র এবং ইতরের প্রভেদ আমাদের সমাজে এবং সাহিত্যে যেরূপ প্রচলিত, পৃথিবীর অন্য কোনও সভ্যদেশে সেরূপ নয়। আমরা সমাজের যেমন অধিকাংশ লোককে শূদ্র করে রেখে দিয়েছি, ভাষারাজ্যেও আমরা সাধুতার দোহাই দিয়ে তারই অনুরূপ জাতিভেদ সৃষ্টি করবার চেষ্টা করছি, এবং অসংখ্য নির্দোষী বাঙ্গলা কথাকে শূদ্ৰশ্রেণীভুক্ত করে, তাদের সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসতে দিতে আপত্তি করছি। সমাজে এবং সাহিত্যে আমরা একই সঙ্কীর্ণ মনোভাবের পরিচয় দেই। বাঙ্গলা কথা সাহিত্যে অস্পৃশ্য করে রাখাটা শুধু লেখাতে “বামনাই’ করা। আজকাল দেখতে পাই অনেকেরই চৈতন্য হয়েছে যে, আমাদেরই মত রক্তমাংসে গঠিত মানুষকে সমাজে পতিত করে রাখবার একমাত্ৰ ফল, সমাজকে দুর্বল এবং প্ৰাণহীন করা । আশা করি শীঘ্রই আমাদের সাহিত্য-ব্রাহ্মণদের এ জ্ঞান জন্মাবে, যে অসংখ্য প্ৰাণবন্ত বাঙ্গলা শব্দকে পতিত করে