আপত্তি হইতে পারে, তাহা জননীর সম্বন্ধ। সে আলোচনা পরে হইবে।
যাঁহারা ইতিহাস পড়িয়াছেন, তাঁহারা জানেন, বিধবা-বিবাহ জগতের কোন দেশে কোনদিন সমাদর পায় নাই। কম-বেশী ইহাকে সকলেই অশ্রদ্ধার চোখে দেখিয়া আসিয়াছে। এ অবস্থায় যে-দেশে এ-প্রথা একেবারেই নিষিদ্ধ, সে-দেশে পুড়াইয়া মারা যে বিশেষ হিতকর অনুষ্ঠান বলিয়াই বিবেচিত হইবে, তাহা আশ্চর্য নয়। অবশ্য এ-কথা স্বীকার করিতে অনেকেরই লজ্জা হইবে, কিন্তু পতিহীনা নারীর এখানে যখন আর তত আবশ্যক নাই, তখন কোনমতে ও-পারে রওনা করাইয়া দিতে পারিলে স্বামী মহাশয়ের কাজে লাগিবার সম্ভাবনা; এই ইচ্ছাই যে এ-প্রথার মূলে, এ-কথা অস্বীকার করা এক গায়ের জোর ভিন্ন আর কিছুতেই পারা যায় না। তা ছাড়া দেখা যায়, যে সমস্ত অসভ্য দেশে স্বামীর মৃত্যুর সহিত স্ত্রী-বধ হইত, তাহাদের ঐ বিশ্বাস একান্ত দৃঢ়। তাহারা মনে করে, মৃতের আত্মা কাছাকাছি, ঝোপে-ঝাপে, গাছপালায় বসিয়া থাকে, সুতরাং সঙ্গিনীকে পাঠাইয়া দিলে উপকার হইবে। কিন্তু আমাদের সুসভ্য এই প্রাচীন দেশ, যে-দেশে আত্মার স্বরূপ পর্যন্ত নির্ণীত হইয়া গিয়াছিল, ঈশ্বরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপিয়া শেষ করা হইয়াছিল, সেদেশের পণ্ডিতেরাও যে বিশ্বাস করিতেন, বধ করিয়া সঙ্গে পাঠানো হয়, ইহাই আশ্চর্য। তবে এ যদি নারী-পূজার একটা বিশেষ পদ্ধতি হইয়া থাকে, ত সে আলাদা কথা। পুরুষ বুঝাইয়াছে, সহমৃতা হওয়া সতীর পরম ধর্ম। মনুও বলিয়াছেন, এক পতি-সেবা ব্যতীত স্ত্রীলোকের আর কোন কাজ নাই। সে ইহকালে পুরুষের সেবা করিয়াছে, পরকালে গিয়াও করিবে; কিন্তু কখন করিবে, কতদিন পরে করিবে, এত ঝঞ্ঝাটে সে যাইতে চাহে নাই। তাহার বিলম্ব সহে না, তাই মরণ-সম্বন্ধে একটু সত্বর ও সতর্ক হওয়াই সে আবশ্যক মনে করিয়াছে। শাস্ত্র বলিয়াছেন, এক মাতৃত্বের কারণেই সে পূজার্হা, সুতরাং সে সুযোগ না থাকিলে তাহাকে লইয়া আর কি হইবে? তারপর ছোট-বড় কীর্তি-