পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
২৮

যাইবে না, এ-সমস্ত দুরূহ বিষয়ে তাহাদের হাত দিতে যাওয়া অনধিকার-চর্চা। এ-সমস্ত প্রশ্ন নিষ্পত্তি করার অধিকার দেশের শুধু তাঁহাদেরই জন্মিয়াছে, শিক্ষা যাঁহাদের হৃদয় প্রশস্ত করিয়া সার্থক হইয়াছে। স্বর্গীয় বিদ্যাসাগরের মত যাঁহাদিগকে সমাজের ভাল-মন্দ স্থির করিয়া দিতে ভগবান নিজের হাতে গড়িয়া পাঠাইয়াছেন, যাঁহাদিগকে দেশের লোক বড় বলিয়া মানিয়া লইয়াছে, এ-সমস্ত সামাজিক প্রশ্নের ভারও দেশের সেই সমস্ত মহৎ লোকের উপর—ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের উপর নহে। কেমন করিয়া জানিবে ইহারা শাস্ত্র, কেন শাস্ত্র? কোন্‌টা প্রতারণা? কি করিয়া বুঝিবে ইহারা, তখন কি দোষ-গুণ সমাজে বিদ্যমান ছিল, এখন কি দোষ-গুণ আছে? কোন্ টোলে এ আলোচনা হয়? কোন্ স্মৃতিরত্নের এ আলোচনা করিবার ধৈর্য এবং সাহস আছে? নিজের দলটি ছাড়া ইহাদের কাছে সবাই ম্লেচ্ছ, সবাই অশুচি। নিজেদের মতটি ছাড়া সমস্তই অশাস্ত্রীয়। নিজেদের আচারব্যবহার ভিন্ন জগতের সমস্ত আচার-ব্যবহারই কদর্য এবং হীন। এক কথায় নিজেরা ছাড়া আর কেহ মানুষই নয়। কালের সঙ্গে সঙ্গে যে নিয়মও বদলায়, এ সত্যের ইহারা কোন ধার ধারে না। তাই সময়োপযোগী কোন একটা নূতন পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা হইবামাত্রই ইহারা ভয়ে সারা হইয়া যায়। কাঁদো-কাঁদো হইয়া জানায়, শাস্ত্রের শ্লোকে খুঁজিয়া মিলিতেছে না, এবং প্রাণপণে বাধা দিয়া মনে করে, দেশের উপকার হইতেছে—শাস্ত্র বজায় হইতেছে। অথচ ইহারাই কি সমস্ত শাস্ত্র মানিয়া চলে? শাস্ত্রে আছে, রাক্ষস-বিবাহ। শাস্ত্রে আছে, অসুর-বিবাহ। শাস্ত্রে আছে, ক্ষেত্রজ সন্তানের বিধি। আধুনিক সমাজে এইগুলা শুরু হইয়া গেলে, ইহারাই কি ভাল মনে করে? অথচ কেন করে না, জিজ্ঞাসা করিলেও ঠিকমত জবাব দিতে পারে না। তখন ঘুরাইয়া ফিরাইয়া নানারকম করিয়া বলিবার চেষ্টা করে, দেশাচার, নয়—তেমন আবশ্যকও নয়—ভাল নয়— মানুষের নৈতিক বুদ্ধি অনুমোদন করে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ, এ-কথা শাস্ত্রে