বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৩৪

—তাহারা তাই করে, কুলত্যাগ করিবার আবশ্যক হয় না, করেও না। অথচ তাহাদের সবার পক্ষে সে পথ বন্ধ। স্বামী বিদ্যমানে সে না পায় দুঃখ-মেহন্নত করিতে, না পায় খাইতে-পরিতে। স্বামী ভাতকাপড় যোগাইতে পারে না, যাহা পারে তাহা শুধু মার-ধোর করিয়া শাসন করিতে। ঐ যে কথা আছে, “ভাত-কাপড়ের কেউ নয়, কিল মারবার গোঁসাই”—কথাটা বাঙলার নিম্ন-শ্রেণীর মধ্যে যে কতদূর সত্য, এবং কতবড় দুঃখেই যে ছড়াটার সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহা লিখিয়া শেষ করা যায় না। আবার ভদ্র ঘরের বিধবার অবস্থা ঠিক নীচজাতীয়া সধবার অনুরূপ। তাহাকেও স্বাধীনভাবে কায়িক পরিশ্রম করিয়া জীবিকা অর্জন করিতে দেওয়া হয় না, কারণ তাহাতে পিতৃকুলের বা শ্বশুরকুলের মর্যাদাহানি হয়, অথচ বাড়ীর মধ্যে ভদ্র-বিধবার অবস্থা কাহারো অবিদিত নাই। আমিও ইতিপূর্বে তাহা একাধিকবার বলিয়াছি। অতএব দেখিতে পাওয়া যায়, শতকরা সত্তর জন হতভাগিনী অন্ন-বস্ত্রের অভাবে এবং আত্মীয়-স্বজনের অনাদর, উপেক্ষা, উৎপীড়নেই গৃহত্যাগ করে—কামের পীড়নে করে না, এবং এইজন্যই কুলত্যাগিনীদের মধ্যে বিধবা অপেক্ষা সধবার সংখ্যাই অধিক। অথচ, কিছুমাত্র অনুসন্ধান না করিয়াই পুরুষ ধরিয়া লইয়াছে, কুলত্যাগ শুধু বিধবাতেই করে; অতএব অদ্ভুত বিধি-নিয়োগের দ্বারা তাহাকে শাসন করাই ঠিক কাজ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কুলত্যাগ যে পতিযুক্তারাই অধিক করে, এবং তাহা পুরুষেরই অত্যাচার-উৎপীড়নের ফলে, এ-কথা কোন্ পুরুষ স্বীকার করিতে সম্মত হইবে? এদিকে পুরুষ যেমন দারিদ্র্য ও কহনাতীত উৎপীড়নে নারীর স্বাভাবিক শুভ-বুদ্ধিকে বিকৃত করিয়া দিয়া ঘরের মধ্যে তাহাকে অতিষ্ঠ করিয়া তোলে, অন্যদিকে তেমনি তাহাকেই আপাতমধুর সুখের প্রলোভনে প্রতারিত করিয়া ঘরের বাহির করিয়া আনে। পুরুষের ভয় নাই, সে যদিচ্ছা সুখ ভোগ করিয়া ফিরিয়া যাইতে পারে। তাই সে ফিরিয়া গিয়া দিন-দুই ঘরের কোণে অনুতপ্তভাবে বসিয়া থাকে। আত্মীয়-স্বজন তাহার পুনরাগমনে