পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীর মূল্য
৪২

একস্থানে লিখিয়া গিয়াছেন, ইহারা নিজের জননীকে (বিমাতা নয়) সুন্দরী বিবেচনা করিলে, পিতার নিকট হইতে বলপূর্বক কাড়িয়া লইয়া বিবাহ করে, এবং ইহাদের সম্বন্ধেই হার্‌বার্ট স্পেন্সরের (Descriptive Sociology) সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে একস্থানে লেখা আছে, “in the Chippewayan tribes divorce consists of neither more nor less than a good drubbing and turning the woman out of doors.” অষ্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীরা “fight with spears for possession of a woman,” আমেরিকার ডগ্‌রিব জাতিরা “fight just like stags.” আমেরিকার মন্ত্র জাতিরা “fight like natural enemies.” অথচ ডগ্‌রিব জাতিরা স্ত্রীকে “use like beast of burden” এবং এক একজন মন্ত্র জীবনে ৪০।৫০-বার বিবাহ করে। অতএব দেখা যায়, এই অসভ্যদিগের স্ত্রী-লাভের যুদ্ধও বন্য পশুর নৈসর্গিক প্রবৃত্তি। ত্যাগ করার প্রয়োজনও ঠিক তাহাই। নারীর মূল্য এখানে এক কাণাকড়িও নাই। নারীও তেমনি। স্বামী যুদ্ধে শেলবিদ্ধ হইয়া ভূপতিত হইবামাত্রই তাহার পতিব্রতা স্ত্রী নিজের জিনিস-পত্র মাথায় তুলিয়া লইয়া নিঃশব্দে বিজেতার অনুসরণ করে। এখানে বন্য পশুর মত নর-নারীর বিশেষ কোন সম্পর্কও নাই। উদ্দালক-পুত্র শ্বেতকেতু যখন নিজের জননীকে অপরিচিত ব্রাহ্মণের দ্বারা বলপূর্বক আকর্ষিত হইতে দেখিয়া পিতাকে প্রশ্ন করিয়াছিল যে, মাকে কোথায় লইয়া যাইতেছে? ইহাও সমাজের সেই অবস্থা। এই অবস্থায় স্ত্রীলোকমাত্রেই পুরুষের সম্পত্তি—যে যতক্ষণ জোর করিয়া দখল রাখিতে পারে, ততক্ষণই। আবার ভাল না লাগিলে ছাড়িয়া দেয়—ভাবটা, যাও চরিয়া খাও। ইহার পরের অবস্থা পলিনেসিয়া, নিউ কালিডোনিয়া এবং ফিজি দ্বীপে অসভ্যদিগের মধ্যে পাওয়া যায়। স্ত্রী-লাভের জন্য ইহারা লড়াই করে এবং নিজের প্রাণ বিপদাপন্ন করিয়াও যাহাকে পছন্দ হয় তাহাকে ঘরে আনে; কিন্তু পছন্দ গত হইবার পরে, অর্থাৎ স্ত্রীর প্রতি বিমুখ হইলে আর তাড়াইয়া দেয় না,— এডমিরাল ফিজরয়, হম্‌বোল্ট, উইল্কেস প্রভৃতি অনেকেই