ইহাদিগের মধ্যেও নারীর পতিপ্রেম, স্বামী-সেবার কথা শোনা যায় না, তাহা নহে। হইতে পারে, জবরদস্তির চোটে, সে যাহাই হৌক, অতিশয় নিষ্ঠুর ডাহোমান, মালগাসি, ফিজিয়ান, ছিপা, বেচয়ানা—ইহাদের সকলের ঘরেই পতিব্রতা স্ত্রী পাওয়া যায়। ডাহোমি ও ফিজি দ্বীপে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবারা আত্মহত্যা করে, তাহা পূর্বেই বলিয়াছি। আমেরিকার মণ্ডান জাতির বিধবারা মৃত স্বামীর কপাল সংগ্রহ করিয়া আনিয়া গলায় মালা করিয়া গাঁথিয়া রাখে, রাত্রে মুণ্ডটাকে বিছানায় লইয়া শয়ন করে, স্নান করাইয়া দেয়, আহার করায়, শীতের দিনে কাঁথা দিয়া রাখে, এমন কি গান গাহিয়াও তাহাকে ঘুম পাড়ায়। অথচ পুরুষেরা জীবিতাবস্থায় কি কীর্তিই না করিয়া যান। তবে এমন কথাও বলিতেছি না যে, সর্বত্রই পুরুষেরা ক্রমাগত অত্যাচার করিয়াই চলে, এবং তৎপরিবর্তে রমণীরা কেবল ভালবাসিতে, সেবা করিতেই থাকে। এমন কথা বলিলে মানবের স্বভাবের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। তবে কোন কোন স্থানে দারুণ অত্যাচার অবিচারের পরিবর্তেও যদি স্নেহপ্রেম সম্ভবপর হয়, তাহা রমণীতেই হয়, এবং সে দৃষ্টান্ত অনুসন্ধান করিলে নির্মম অসভ্য মানব-সমাজেও যে দুর্লভ নয়, তাহাই গোটাদুই দৃষ্টান্ত দিয়া দেখাইলাম মাত্র। নারীর এই মূল্য পুরুষ স্বীকার করিতে চাহে না এবং করে না, তাহা বহুবিধ প্রকারেই বলিবার চেষ্টা করিয়াছি। অবশ্য ইহার প্রতিকূলেও কিছু বলিবার আছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও এ-কথা সত্য যে, তাহা অস্বীকার করিয়া লইলেও এ প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য তিলার্ধও বিচলিত হয় না।
সে যাহাই হৌক, আমি এতক্ষণ যাহা বলিয়া আসিয়াছি তাহা এই যে, প্রায় কোন দেশেই পুরুষ নারীর যথার্থ মূল্য দেয় নাই এবং তাহাকে নির্যাতন করিয়াই আসিতেছে। নির্যাতন করিয়া যে আসিতেছে সে-কথা অস্বীকার করিবার পথ নাই, কিন্তু ন্যায্য মূল্য হইতে যে চিরদিন বঞ্চিত করিয়াই আসিতেছে, এই কথাটার উপরেই তর্ক বাধিতে পারে। কারণ, কি তাহার সত্য মূল্য তাহা স্থির না করার