যত ক্ষীণ, সে ততই অমানুষ। এই রস অক্ষুণ্ণ রাখিবাব প্রয়াসেই মানবের অজ্ঞাতসারে সতীত্বের সৃষ্টি, এই রস-মাহাত্ম্য গাহিয়াই মানুষ কবি। এই রসের অবমাননা করিয়াই ভারতের যুগ-বিশেষ, এবং মধ্যযুগের ইউরোপ নারীকে peculiar representative of sexuality বলিয়া ভুল করিয়া যে অধঃপথে গিয়াছিল, তাহা অস্বীকার করা চলে না। এই রসবোধের প্রধান উপাদান নারীর সৌন্দর্য। পুরুষ যত বর্বরই হৌক, রূপের সম্মান সে না করিয়াই পারে না। এমন কি পটুয়ারা, যাহারা গরুর অভাবে স্ত্রীলোকদিগের কাঁধে লাঙ্গলের জোয়াল তুলিয়া দিয়া জমি চাষ করে, তাহাদের মধ্যেও দেখা যায় যে, যে রমণীগুলি অপেক্ষাকৃত সুন্দরী তাহারা লাঙ্গল কম টানে। আবার সৌন্দর্যের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদিগকে বেশী করিয়া লাঙ্গল টানিতে হয়। রেভঃ জন রস কোরিয়ার ইতিহাসে কোরিয়াবাসীদের সম্বন্ধেও ঠিক এইরূপ ব্যবহার অনেকস্থানেই লিখিয়া গিয়াছেন।
তবেই দেখা যায়, তা যত অল্পই হৌক, রূপের একটু সুবিধা আছেই, এবং এই সুবিধা শুধু তাহার একার নহে, পুরুষেরও হৃদয়বৃত্তি উচ্চ করিবার পক্ষেও ইহা যথেষ্ট সাহায্য করে। নিজের নিষ্ঠুরতা সে দুটো দিনের জন্যও দমন করিতে শিক্ষা করে। কিন্তু এই শিক্ষা তাহার নিজের দোষেই অধিকদূর অগ্রসর হইতে পায় না। দেখা যায়, সমাজ যাহার যত নীচ, নারীর সৌন্দর্যও সেখানে তত অল্প এবং ততোধিক ক্ষণস্থায়ী। নজীর তুলিয়া আর প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি করিব না। কিন্তু, প্রায় পর্যটকেই লিখিয়া গিয়াছেন, যাহাদের মধ্যেই নারীর status অত্যন্ত low, তাহাদের মধ্যেই পুরুষেরা বরং দেখিতে ভাল, কিন্তু রমণীরা এতই কুৎসিত কদাকার যে চাহিয়া থাকিতেও ঘৃণা বোধ হয়। কিন্তু ইহাই কি স্বাভাবিক এবং সঙ্গত নয়? নিদারুণ পরিশ্রম, দিনের অধিকাংশ সময় রুদ্ধ দুষ্ট বায়ুতে চলা-ফেরা, অতি অল্প বয়সেই সন্তান প্রসব ও প্রতিপালন করা, পুরুষের ভুক্তাবশিষ্ট কদর্য আহার্য তক্ষণ করা,—কেমন করিয়া তাহার রূপ দীর্ঘকাল স্থায়ী হইতে পারে?