পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯
নারীর মূল্য

বোঝ?” মনে পড়ে, সেই আম-কেনার কথা। লোকটা বলিল, “চেখে নিন—মিষ্টি গুড়।” খেয়ে দেখি তত টক আমার জীবনে খাই নাই। কিন্তু লোকটাকে কিছুতেই স্বীকার করাইতে পারিলাম না। সে ক্রমাগত চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, “টক বললেই শুনব? আমার গাছের আম আমি জানিনে!” এর আর উত্তর কি?

 ইংরাজীতে যাহাকে ethics বলে, তাহার একটা গোড়ার কথা এই যে, বিসদৃশ হেতু না থাকিলে আমার স্বাধীনতাটি কেবল তত দূর পর্যন্ত টানিয়া লইয়া যাইতে পারি, যতক্ষণ না তাহা আর একজনের তুল্য স্বাধীনতায় আঘাত করে। এই দুটো কথার দ্বারা মানুষের প্রায় সমস্ত কাজ নিয়ন্ত্রিত করা যাইতে পারে, এবং আমার বিশ্বাস, যে কোন সামাজিক প্রশ্নের স্থানও ইহারই মধ্যে সঙ্কুলান হয়। ইহাকে যে সমাজ যত বেশী অগ্রাহ্য করিয়া চলিয়াছে, সে তত বেশী নারীর উপর অন্যায় করিয়াছে এবং তাহার প্রাপ্য অংশ হইতে তাহাকে বঞ্চিত করিয়া নারীকেও নত করিয়াছে, নিজেরাও অবনত হইয়াছে। একটা দৃষ্টান্ত দিয়া বলি। একটি কন্যা হয়ত রুগ্না, দুর্বল, অশিক্ষিত এবং অপটু, তত্রাচ একটা বিশেষ বয়সে তাহার বিবাহ দিতে হইবে, অর্থাৎ মাতৃত্বের গুরুভার তাহাকে মাথায় তুলিতেই হইবে। অথচ আর একটি বিধবা মেয়ে হয়ত সবল সুস্থ, শিক্ষিতা এবং মাতৃত্বের সম্পূর্ণ উপযোগিনী— আদর্শ জননীর সমস্ত সদ্‌গুণে হয়ত ভগবান তাহাকে ভূষিত করিয়াছেন, তবুও তাহাকে তাহার স্বাভাবিক ন্যায়সঙ্গত অধিকার হইতে বঞ্চিত করিতে হইবে। ইহাতে শাস্ত্রকারের মর্যাদা যদি-বা বজায় থাকে, ধর্মের মর্যাদা যে বজায় থাকে না, তাহা নিঃসংশয়ে বলিতে পারা যায়। প্রথমটাতেও নয়, পরেরটাতেও না।

 সুসভ্য মানবের সুস্থ সংযত শুভ-বুদ্ধি যে অধিকার রমণীজাতিকে সমর্পণ করিতে বলে, তাহাই মানবের সামাজিক নীতি এবং তাহাতেই সমাজের কল্যাণ হয়—কোন-একটা জাতির ধর্ম-পুস্তকে কি আছে না আছে, তাহাতে হয় না। নারীর মূল্য বলিতে আমি এই নীতি ও