পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S3 নির্বাসিতের আত্মকথা জন পাঞ্জাবী সাধু। কিন্তু রেলওয়ে ষ্টেসন হইতে নামিবার পর যখন । হাঁটাপথ আরম্ভ হইল, তখন বুঝিলাম ব্যাপারটা নিতান্ত সুবিধার নহে। কুশী নদীর ধারে ধারে গভীর জঙ্গল ; আর তাহার মাঝ দিয়া ৫।৬ দিন ধরিয়া প্ৰত্যহ ১৫১৬ ক্রোশ করিয়া হাটিতে হঁটিতে আমার পায়ে ত গোদ নামিয়া গেল! কিন্তু সাধুদের ক্লান্তি নাই, অবসাদ নাই, কাতরোক্তি মাই। দিনের পর দিন তাহারা রোদ মাথায় করিয়া অবলীলাক্রমে চলিয়াছে। “তিরাই” অতিক্রম করিয়া ক্ৰমে নেপালে একটা ছোট সহরে আসিয়া পৌছিলাম। জায়গাটার নাম হনুমান নগর। অধিবাসী প্ৰায় সমস্তই হিন্দুস্থানী ; অনেকগুলি মারোয়াড়ীর দোকানও আছে ; কিন্তু রাজকৰ্ম্মচারী সমস্তই গুর্থ। শহরের রাস্তাঘাটগুলি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ; এবং বড় রাস্তার ধারে ধারে ফুট-পাথও আছে। নেপালকে ছেলেবেলা হইতে আমার একটু “জঙ্গলী” বলিয়। ধারণা ছিল ; আজ সে ধারণা অনেকটা কাটিয়া গেল। স্বাধীন হিন্দুরাজার রাজ্যে আসিয়া পৌঁছিয়াছি। এই কথা ভাবিয়া মনটা যেন তোলপাড় করিতে লাগিল । ভক্তিভাবে নেপালের মাটীতে মাথা ঠেকাইয়া হা করিয়া খুব খানিকটা স্বাধীন দেশের হাওয়া খাইয়া লইলাম। দেশটা বাস্তবিকই বড় সুন্দর। পাড়াগাঁয়ের পাশ দিয়া যাইবার সময় দেখিলাম যে চালাঘর গুলি । আমাদের দেশের চালা ঘরের চেয়ে ঢের বেশী সুশ্ৰী। ८ष कि फ्रां७, যেন সৌন্দর্ঘ্যের ঢেউ খেলিতেছে, কোথাও একটু বিষাদ বা দৈন্তের। ছায়ামাত্র নাই। গ্রামবাসীরা সাধুদের বিশেষ ভক্ত। একদিন চলিতে চলিতে জরাক্রান্ত হইয়া একটা গ্রামের ধারে মাঠের উপর পড়িয়ছিলাম। আমার সঙ্গীটী গ্রামের মধ্যে জল আনিতে গিয়া তঁহার প্রকাণ্ড লোটা ভরিয়া দুধ লইয়া আসিলেন। তৃষ্ণাৰ্ত্ত সাধুকে কি জল দেওয়া যায় !