পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ । 8ዓ' দেখিলাম অসুখ করা ছাড়া আর অন্য উপায় নাই। কাজেই আমাদের সকলকার অসুখ করিতে লাগিল। নিত্য নিত্য নূতন অসুখ কোথায় খুজিয়া পাওয়া যায় ? পেট কামড়ান, মাথা ধরা, বুক দুড় দুড় করা, গা বমি বমি করা সবই যখন একে একে স্কুরাইয়া আসিল তখন বাহিরে প্রকাশ পায় না। এমন অসুখ আবিষ্কারের জন্য আমাদের মাথা ঘামিয়া উঠিল। রোগ ত একটা কিছু চাই-ত না হইলে প্ৰাণ ষে বঁাচে না। ডাক্তার সাহেব আসিলে পণ্ডিত হৃষীকেশ। গম্ভীর ভাবে জানাইলেন যে তঁাহার বামচক্ষুর উপরের পাতা তিন দিন ধরিয়া নাচিতেছে, সুতরাং তিনি যে কঠিন পীড়াগ্ৰস্ত সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। র্তাহার মনে হইতেছে যে হাসপাতালের অন্ন ভিন্ন তঁহার বঁচিবার আর উপায় নাই । ডাক্তার বেচার হাসিয়া তাহারই ব্যবস্থা করিয়া দিয়া গেলেন। হঠাৎ আমরা আরও একটা পথ আবিষ্কার করিয়া ফেলিলাম। সেটা এই যে পয়সা ਨਿਸ਼ জেলখানার মধ্যে বসিয়া সবই পাওয়া যায় { জেলে। প্রহরী ও পাচকের হাতে যৎকিঞ্চিৎ দক্ষিণ দিতে পারলেই ভাতের ভিতর হইতে কৈ মাছ ভাজা ও রুটির গাদার ভিতর হইতে আলু পেয়াজের তরকারী বাহির হইয়া আসে, এমন কি পাহারাওয়ালার পাগড়ীর ভিতর হইতে পান ও চুরুট বাহির হইতে দেখা গিয়াছে। একটা মহা অসুবিধা ছিল এই যে এক কুঠরীর লোকের সহিত অপর কুঠরীর লোকের কথা কহিবার হুকুম ছিল না। প্রথমে লুকাইয়া লুকাইয়া এক আধটা কথা কওয়া হইত ; তাহাতে পাহারাওয়ালাদের । ঘোরতর আপত্তি। তাহার জেলারের কাছে রিপোর্ট করিবার ভয় দেখাইতে লাগিল। হঠাৎ কিন্তু এক দিন দেখা গেল তাহারা শান্ত শিষ্ট হইয়া গিয়াছে; আমরা চীৎকার করিয়া কথা কহিলেও অ তাহারা শুনিতে পায় না। অনুসন্ধানে জানা গেল আমাদের একজন বন্ধু রৌপ্য ।