পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ (\O একরূপ জোর করিয়াই কলিকাতা ন্যাশন্যাল কলেজে আসিয়া ভৰ্ত্তি হয়। কিন্তু তাহার প্রাণের গভীরতর আকাঙ্ক্ষা কলেজের বিদ্যায় মিটাল না, শেষে বাড়ী হইতে পলাইয়া আসিয়া সে বাগানে যোগ দিল। জেলে আসিবার পর চীৎকার করিয়া, লাফালাফি করিয়া, গান গাহিয়া, কঁধে । চড়িয়া, আম কঠাল চুরি করিয়া সে যে শুধু আমাদেরই অস্থির করিয়া তুলিল তাহা নহে; জেলের কর্তৃপক্ষগণও তাহার বক্তৃতার ও গানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হইয়া উঠিলেন। রাত বারটা একটা বাজিয়া চলিয়াছে শচীনের গানের আর বিরাম নাই! জেলার বাবুটী নিতান্ত ভদ্রলোক । এতগুলা ভদ্রলোকের ছেলেকে তাহার জেলের মধ্যে পুরিয়া দেওয়ায় তিনি নিতান্তই বিব্রত হইয়া পড়িয়াছিলেন। একদিকে সরকারী চাকরী, পেন্সন পাইবার আর বৎসর খানেক মাত্ৰ বিলম্ব-আর অপর দিকে চক্ষুলজ্জা—এই দোটানায় পড়িয়া বেচারার একেবারে প্রাণান্ত! একে ভদ্রলোক প্রৌঢ় বয়সে চতুর্থ না পঞ্চম পক্ষের পাণিগ্রহণ করিয়াছেন তাহার উপর রাত্রিকালে ছেলেদের গানের জ্বালায় অস্থির! একদিন প্ৰাতঃকালে তিনি নিতান্ত ভালমানুষের মত আসিয়া নিবেদন করিলেন, যে, ছেলেদের বুঝাইয়া সুঝাইয়া যেন আমরা একটু শান্ত করিয়া রাখি । কেন না। রাত্রিকালে গৃহিণীর ও মশকের উপদ্রবের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেদের গানের উপদ্রব আসিয়া জুটলে তাহার আর এক বৎসর বাঁচিয়া থাকিয়া পেন্সন ভোগ করিবার সুবিধা মিলিবে না। এ হেন সদযুক্তির পৰু, আর কি করা যায় ? কথামালা ও শিশুশিক্ষা হইতে উদ্ধৃত করিয়া অনেকগুলি ভাল ভাল উপদেশ ছেলেদের শুনাইয়া দিয়া যথাসাধ্য কৰ্ত্তব্যপালন করিলাম ; কিন্তু সদুপদেশ মত কাৰ্য্য করিবার বুদ্ধিমুদ্ধিই যদি তাহদের থাকিবে, তাহা হইলে আর ভারত-উদ্ধার করিবার কুপ্রবৃত্তি তাহাদের স্কন্ধে চাপিবে কেন ?