পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ । G6 আনন্দের সশব্দ অভিব্যক্তিতে র্তাহারও ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। কানাই অমনি খানকয়েক বিস্কুট লইয়া তাহার হাতের মধ্যে গুজিয়া দিল । বিস্কুট লইয়া অরবিন্দ বাবু চাদরের মধ্যে মুখ লুকাইলেন ; নিদ্রাভঙ্গের আর কোনও লক্ষণই দেখা গেল না! চুরিও ধরা পড়িল না ! রবিবারে আমাদের স্মৃত্ত্বির মাত্রা একটু বাড়িয়া যাইত। আত্মীয় স্বজন ও বাহিরের অনেক লোক আমাদের সঙ্গে দেখা করিতে আসিতেন ; সুতরাং অনেক প্রকার সংবাদদি পাওয়া যাইত । মিষ্টান্নাও যথেষ্ট পরিমাণে মিলিত। বিপুল হাস্যরসের মাঝে মাঝে একটু আধটু করুণ রসও দেখা দিত। শচীনের পিতা একদিন তাহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছিলেন। জেলে কি রকম খাদ্য খাইতে হয় জিজ্ঞাসা করায় শচীন লপসীর নাম করিল। পাছে লপসীর স্বরূপ প্ৰকাশ পাইয় তাহার পিতার মনে কষ্ট হয় সেই ভয়ে শচীন লপসীর গুণগ্ৰাম বৰ্ণনা করিতে করিতে বলিল-“লপসী খুব পুষ্টিকর জিনিষ।” পিতার চক্ষু জলে ভরিয়া আসিল। তিনি জেলার বাবুর দিকে মুখ ফিরাইয়া বলিলেন—“বাড়ীতে ছেলে আমার পোলাও এর বাটী টান মেরে ফেলে দিত ; আর আজ লপসী তার কাছে খুব পুষ্টিকর জিনিষ !” ছেলের এ অবস্থা দেখিয়া বাপের মনে যে কি হয় তাহা তখনও ভাল করিয়া বুঝি নাই, তবে তাহার ক্ষীণ আভাষ যে একেবারে পাই নাই তাহাও নয়। একদিন আমার আত্মীয়-স্বজনেরা আমার ছেলেকে আমার সহিত দেখা করাইতে লইয়া,আসিয়াছিলেন। ছেলের বয়স তখন দেড় বৎসর মাত্র, কথা কহিতে পারে না। হয়ত এ জন্মে তাহার সহিত আর দেখা হইবে না। ভাবিয়া তাহাকে কোলে লইবার বড় সাধ হইয়াছিল। কিন্তু মাকের লোহার রেলিংগুলা আমার সে সাধ মিটাইতে দেয় নাই। কারাগারের প্ৰকৃত মুক্তি সেইদিন আমার চোখে ফুটিয়াছিল! যাকু সে কথা। এইরূপে ।