পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ve নির্বাসিতের আত্মকথা ত সুখে দুঃখে জেলখানায় আমাদের দিন কাটিতে লাগিল ; ওদিকে ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে বিচারও আরম্ভ হইয়া গেল। রাস্তায় লোকে লোকারণা ; আদালতে উকিল ব্যারিষ্টারের ছড়াছড়ি, কিন্তু আমাদের সে দিকে লক্ষ্য নাই। সবটাই যেন আমাদের চোখে একটা “প্ৰকাণ্ড তামাসা বলিয়া মনে হইতে লাগিল। কত রকম বেরকমের সাক্ষী আসিয়া সত্য মিথ্যার খিচুড়ি পাকাইয়া যাইত ; আমরা শুধু শুনিতাম আর হাসিতাম। তাহদের সাক্ষ্যের সহিত যে আমাদের মরণ বঁাচনের সম্বন্ধ এ কথাটা মনেই আসিত না। স্কুলের ছুটীর পর ছেলেরা যেমন মহাশূৰ্ত্তিতে বাড়ী ফিরিয়া আসে, আমরাও সেইরূপ আদালত ভাঙ্গিবার পর গান গাহিতে গাহিতে, চীৎকার করিতে করিতে গাড়ী চড়িয়া জেলে ফিরিয়া আসিতাম। তাহার পর সন্ধ্যার সময় যখন সভা বসিত তখন বালি সাহেব কি রকম ফিরিঙ্গি-বাঙ্গলায় সাক্ষীদের জেরা করে, নর্টন সাহেবের পেণ্টলানটা কোথায় ছেড়া আর কোথায় তালি লাগান, কোট ইন্সপেক্টরের গােঁফের ডগা ইদুরে থাইয়াছে কি আরমুলায় খাইয়াছে— * এই সমস্ত বিষয়ে উল্লাসকর গভীর গবেষণা করিত আর আমরা প্ৰাণ ভরিয়া হসিতাম। কিন্তু এই হাসি-পর্বের পর যে একটা প্ৰকাণ্ড কান্নাপৰ্ব্ব আছে তাহা ভাল করিয়া বুঝি নাই। নরেন্দ্ৰ গোস্বামীর কথা পূর্বেই বলিয়াছি । আমরা যাহা ভয় করিয়াছিলাম। ফলে তাহাই হইল। বিচার আরম্ভ হুইবার দুই চারি দিন পরেই সে সরকারী সাক্ষী হইয়া কাঠগড়ায় গিয়া দাড়াইল। তাহার সাক্ষ্যের ফলে চারিদিকে নূতন নূতন থানাতল্লাসী আরম্ভ হইল ; আর পণ্ডিত হৃষীকেশের উর্বর-মস্তিক্ষ-প্রসুত মারাঠী ও মাদ্রাজী নেতৃবৃন্দকে আবিষ্কার করিবার জন্য পুলীস চারিদিকে ছুটাছুটি করিতে লাগিল। :