পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম পরিচ্ছেদ \) বেলা ও রাত্রি কালে চুইদল গোরা সৈন্য আসিয়া জেলের ভিতরে ও বাহিরে পাহারা দিতে আরম্ভ করিল। কর্তৃপক্ষের সন্দেহ লইয়াছিল যে আমরা বোধ হয় জেল হইতে পলাইয়া যাইবার চেষ্টা করিব ! প্রথম দুইটী কুঠরীতে কানাই ও সত্যেন আবদ্ধ থাকিত। আমরা পােচ সাত দিন অন্তর এক কুঠারী হইতে অন্য কুঠরীতে বদলী হাইতাম । যখন কানাই বা সত্যেনের কাছাকাছি কোন কুঠরীতে আসিতাম। তখন রাত্রিকালে চুপি চুপি তাহাদের সহিত কথা কহিতে পারিতাম। দিনের বেলা কাহারও সহিত কথা কহিবার কোন উপায়ই ছিল না। প্ৰাতঃকালে ও বৈকালে আধঘণ্টা করিয়া উঠানের মধ্যে ঘুরিতে পাইতাম ; কিন্তু সকলকেই পরস্পরের কাছ হইতে দূরে দূরে থাকিতে হইত। প্রহরীদের চক্ষু এড়াইয়া কথা কহিবার সুবিধা হইত না। সমস্ত দিন চুপ করিয়া বসিয়া থাকার যে কি যন্ত্রণা তাহা ভূক্তভোগী ভিন্ন অপর কাহারও বুঝিবার উপায় নাই। একদিন সুপারিনটেনডেন্ট সাহেবের নিকট হইতে পড়িবার জন্য বই চাহিলাম। তিনি দুঃখের সহিত জানাইলেন যে, গবৰ্ণমেণ্টের অনুমতি ব্যতীত আমাদের সম্বন্ধে তিনি কিছুই করিতে পারেন না। নরেনের মৃত্যুর পর তাঁহার হাত হইতে সমস্ত ক্ষমতা কাড়িয়া লওয়া হইয়াছে। আমরা যখন বাহিরে ঘুরিতাম তখন কানাই ও সত্যেনের কুঠরীর দরজা বন্ধ থাকিত। একদিন দেখিলাম কানাইলালের দরজা খোলা। রহিয়াছে। আমরা সেদিকে যাইবার সময় প্রহরীও বাধা দিল না। পরে শুনিলীম যে কানাই লালের ফাঁসির দিনও স্থির হইয়া গিয়াছে। সেই জন্য প্রহরীরা দয়া করিয়া কানাইকে শেষ দেখা দেখিবার জন্য আমাদিগকে ছাড়িয়া দিয়াছে। . যাহা দেখিলাম তাহা দেখিবার মত জিনিষই বটে ! আজিও সে ছবি ।