পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ br's গির্জায় গিয়া পাদরী সাহেবের পদপ্রান্তে নামাইয়া দিয়া আসিতেন। বৎসরের মধ্যে ঐ একদিন তিনি শান্ত সৌম্যমূৰ্ত্তি ধরিতেন ; সে দিন কোন কয়েদীকে তাড়না করিতেন না ; আর বাকি ৩৬৪ দিন মূৰ্ত্তিমান যমের মত কয়েদী তাড়াইয়া বেড়াইতেন। কয়েদীদের স্বভাবের মধ্যে এই বিশেষত্ব লক্ষ্য করিয়াছি যে দুৰ্দান্ত লোকদিগের প্রতি তাহারা সহজেই আকৃষ্ট হয়, এবং এইরূপ লোকদিগেরই সহজে বশ্যতা স্বীকার করে। ব্যারী সাহেবের নিকট প্রহার খাইবার পর অনেক কয়েদীকে বলিতে শুনিয়াছি-“শালা ঘড় মরদ হৈ ।” যাহারা ভাল মানুষ তাহার কয়েদীদের মতে স্ত্রী জাতীয়। কয়েদীরা কোন কুকাৰ্য্য করিয়া ভগবানের নাম করিয়া ক্ষমা চাহিলে বারী বলিতেন-“জেলখানা আমার রাজ্য ; এটা ভগবানের এলাকাভুক্ত নহে। ৩০ বৎসর ধরিয়া আমি পোর্টব্লেয়ারে আছি ; একদিনও এখানে ভগবানকে আসিতে দেখি নাই।”-ব্যারী সাহেবের মুখের কথা হইলেও ইহা সম্পূর্ণ সত্য। জেলে ঢুকিলে প্রথমেই নজরে পড়ে বহু জাতির সমাবেশ। বাঙ্গালী, হিন্দুস্থানী, পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধী, বৰ্ম্মী, মাদ্রাজী সব মিশিয়া খিচুড়ি পাকাইয়া গিয়াছে। হিন্দু মুসলমানের সংখ্যা প্ৰায় সমান সমান ; বল্মীও যথেষ্ট। ভারতবর্ষে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় হিন্দুর এক চতুর্থাংশ কিন্তু জেলখানায় হিন্দু মুসলমানের সংখ্যা প্ৰায় সমান কি করিয়া হইল তাহা 'র করিতে গেলে উভয় জাতির একটা প্রকৃতিগত পার্থক্য আছে বলিয়া মনে হয়। ব্ৰহ্মদেশে লোকসংখ্যা মোট এক কোটী ; অর্থাৎ সমস্ত বাঙ্গালীর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ; কিন্তু এখানে বাঙ্গালী অপেক্ষা ব্ৰহ্মদেশীয় লোকের সংখ্যা অনেক বেশী। খুন, মারামারি করিতে ব্ৰহ্মদেশীয় লোক বিশেষ মজবুদ। অল্পদিন মাত্র তাহারা স্বাধীনতা হারাইয়াছে