পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bやり নির্বাসিতে আত্মকথা লাগিয়াছিল। মানুষ যখন সব আশ্রয় হারাইয়া দিশেহারা হইয়া পড়ে তখন অগতির গতিকে তাহার মনে পড়ে। সেই জন্যই জেলখানায় দেখিতে পাই যাহারা দুৰ্দান্ত পাষণ্ড তাহারাও এক এক গাছ মালা লইয়া মাঝে মাঝে নাম জপ করে। আগে এ সব দেখিয়া বড় হাসি পাইত ; তাহার পর মনে হইল ইহাতে হাসিবার কি আছে ? আৰ্ত্তভক্তও তা ভগবানের ভক্তের মধ্যে গণ্য । কিন্তু দুঃখের মাত্ৰ দিন দিন যেন অসহনীয় হইয়া উঠিতে লাগিল । ইণ্ডিয়া গবৰ্ণমেণ্টের আদেশমত নূতন সুপারিনটেনডেন্ট আসিয়া যখন আমাদের ঘানিতে জুড়িয়া তেল পিষাইয়া লইবার ব্যবস্থা করিলেন তখন মনের মধ্যে মাঝে মাঝে বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা দিতে আরম্ভ করিল। বাপ করিয়া ফাসিকাঠে ঝুলিয়া পড়া সহজ ; কিন্তু দিনের পর দিন তিল তিল করিয়া মরা তত সোজা নয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১ ধারা অনুসারে যাহারা যাবজীবন দ্বীপান্তর দণ্ডে দণ্ডিত তাহদের মধ্যে প্ৰায় কেহই বঁচিয়া থাকিয়া দেশে ফিরে নাই। আণ্ডামান নিকোবর ম্যানুয়েল অনুসারে ইহাদের পক্ষে যাবজীবন মানে ২৫ বৎসর ; তাহার পরও খালাস পাওয়া না পাওয়া সরকার বাহাদুরের ইচ্ছাধীন। মনে হইতে লাগিল যে এইরূপ কৰ্ম্মভোগ না কয়িয়া একগাছা দড়ি লাগাইয়া না হয় বুলিয়া পড়ি—কিন্তু সাহসে কুলাইল না। মরার জন্য যতটা দুঃসাহসের দরকার । আমার বোধ হয় ততটা ছিল না। কাজে কাজেই যথাসাধ্য ঘানি পিষিয় । সরকারের তেলের ভাণ্ডার পূর্ণ করিতে লাগিলাম। একদিনের কথা । বেশ মনে পড়ে। সকাল হইতে সন্ধ্যা পৰ্যন্ত ঘানি ঘুরাইয়াও ৩০ পাউণ্ড তেলপুৱা করিতে পারিলাম না। হাত পা এমনি অবশ হইয়া গিয়াছে যে মনে হইতেছিল বুঝি বা মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া যাই। তাহার উপর সমস্ত দিন প্রহরীদের কাছে কাজের জন্য গালি খাইয়াছি। সন্ধ্যাবেলা