পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిరి নির্বাসিতের আত্মকথা আৰ্ত্তভক্তদের মধ্যে মোল্লারও অসদ্ভাব নাই। কাজে কাজেই হিন্দুর - ধৰ্ম্মান্তর গ্ৰহণ লইয়া উভয় সম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মধবজীদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ঝগড়ি চলিত। একজন হিন্দু বিশেষতঃ ব্ৰাহ্মণের ছেলে যদি ঘানি পিষিতে যায় তাহা হইলে পাঁচ সাতজন মোল্লা মিলিয়া তাহাকে নানারূপ বিপদে ফেলিবার ষড়যন্ত্র করে আর সে যদি মুসলমান হয় তাহা হইলে যে কিরূপ পরমসুখে দিন কাটাইতে পরিবে সে সম্বন্ধে নানারূপ প্রলোভন দেখায়। মুসলমানদের মত আৰ্যসমাজীরাও জেলের মধ্যে প্রচার কাৰ্য চালাইতে থাকে, এবং ধৰ্ম্মভ্ৰষ্ট হিন্দুকে আৰ্যসমাজভুক্ত করিয়া লইবার জন্য প্ৰাণপণে চেষ্টা করে। সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে সেরূপ কোন আগ্ৰহ দেখা যায় না । তাহারা দল হইতে বাহির করিয়া দিতেই জানে, নূতন কাহাকেও দলে টানিয়া লইবার সামর্থ্য তাঁহাদের নাই। এই দলাদলির ফলে আর কিছু হোক আর নাই হোক হিন্দুর টিকি ও মুসলমানের দাড়ী সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়া গিয়াছে। বাঙ্গলার নিম্নশ্রেণীর মধ্যে যাহারা দেশে কস্মিনকালেও টিকি রাখে না। তাহারাও কালাপানিতে গিয়া হাত দেড়েক টিকি গজাইয়া বসে আর মুসলমানেরা দুলিয়া দুলিয়া “আলীর সহিত হনুমানের যুদ্ধ” “শিবের সহিত মহম্মদের লড়াই” “সোণাভান বিবির কেচ্ছা” প্রভৃতি অদ্ভুত অদ্ভুত উপাখ্যান পাঠ করিয়া পরকালের পাথেয় সংগ্ৰহ করিতে লাগিয়া যায়। আমরা হিন্দু মুসলমান সকলকার হাত হইতেই নির্বিচারে রুটি খাই । দেখিয়া মুসলমানেরা প্ৰথম প্রথম আমাদের পরকালের সদগতির আশায় উল্লসিত হইয়া উঠিয়াছিল, হিন্দুরা কিঞ্চিৎ ক্ষুণ হইয়াছিল ; শেষে বেগতিক দেখিয়া উভয় দলই স্থির করিল যে আমরা হিন্দুও নই, মুসলমানও নই-আমরা বাঙ্গালী। রাজনৈতিক কয়েদী মাত্রেরই শেষে সাধারণ নাম হইয়া উঠিল-বাঙ্গালী ।