পাতা:নিশীথ-চিন্তা - কালীপ্রসন্ন বিদ্যাসাগর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুঃখে সুখ । “Oе সম্পদ ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তল। উঠাই।ার প্রথম চিত্রের কোন স্থানেও দুঃখের এমন একটি রেখাপাত হয় নাই, যাহা কাহারও চাহিয়া দেখিতে ইচছা হইতে পারে। উহার আগাগোড়া সর্বত্রই সুখের সমান উল্লাস-সর্ববত্রই নব-বসন্তের নূতন আমোদ, নবন্ধুলিকাশিত ফুলের নূতন, শোত্মা ; ফুলের হাসি, ফুলের মধু ফুলের সৌরভ, ফুলের গৌরব ; এবং উহাতে যতটুকু সুখ আছে, তাহা ও সুতরাং ফুলের মত কোমল। কিন্তু সে সুখ এত লঘু, এত তরল যে, তাহা মনুষ্য হাদয়কে ক্ষণকালও আকৃষ্ট রাখিতে পারে না,-তাহা মনুষ্যহীদয়ের উপর দিয়াই ভাসিয়া যায়, অন্তস্তলো প্রবেশ-পথ পায় না। ;-মনুষ্যের মধ্যে যাহারা বড়, যাহাদিগের কল্পনা উচ্চ, আশা ও পিপাসা উচ্চজাতীয়, তাহারা কেহই মালবিক কিংবা অগ্নিমিত্রের সেই ষটুপদ-বিলাস-যোগ্য সামান্য সুখকে আপনাদিগের প্রাণের মধ্যে আনিয়া পুষিয়া রাখিবার জন্য অধীর হয়। না। কালিদাসের শেষ চিত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, সেখানে সকলই আর এক প্রকার । সে চিত্রের চরম লক্ষ্য সুখ । কিন্তু সে সুখ, মাধুৰ্য্যে টল-টল হইয়াও, স্বাদে একটুকু বেশী বিশুদ্ধ, এবং এই জন্যই, অগ্নি-দগ্ধ সুবর্ণের ন্যায়, দুঃখ-দগ্ধ । মনুষ্যমাত্ৰই তাদৃশ মহৎ সুখকে আপনার মন ও প্রাণের মধ্যস্থলে যজ্ঞীয় অগ্নির ন্যায় প্রতিষ্ঠা করিয়া পূজা করিতে চাহে, অথচ যে যখন হাত বাড়ায়, তাহারই হাতে আগুনের একটুকু ঝােজ লাগে—— সেই কঁাদিয়া অধীর হয় ।