শুধু অতুলকে জ্যান্ত পুঁততে চেয়েছিল। আর আমি খিলখিল করে হাসি। শাক দিয়ে মাছ ঢেকো না দিদি—আবার ঝাঁটা লোকে কি করে মারে? ধরে মারেনি বলে তোমার মন ওঠেনি?
সিদ্ধেশ্বরী অবাক হইয়া গেলেন। আস্তে আস্তে বলিলেন ওকি কথা মেজবৌ? আমি কি তাকে শিখিয়ে দিয়েচি?
মেজবৌ চাবির ব্যাপার হইতেই অন্তরে জ্বলিয়া মরিতেছিল, উদ্ধত ভাবে জবাব দিল, সে তুমিই জানো। কেউ কারো মন জানতে যায় না দিদি, চোখে দেখে, কানে শুনেই বলতে হয়। আমরা নূতন লোক, তোমার সংসারে এসে পড়ে যদি আপদ-বালাই হয়ে থাকি, বেশ ত তুমি নিজে বললেই ত ভাল হয়, আর একজনকে লেলিয়ে দেওয়া কেন?
এ অভিযোগের উত্তর সিদ্ধেশ্বরীর যুখে যোগাইল না, তিনি বিহ্বলের মত চাহিয়া রহিলেন।
মেজবৌ অধিকতর কঠোরস্বরে কহিল, আমরাও ঘাস খাইনে দিদি, সব বুঝি। কিন্তু এমন করে না তাড়িয়ে দুটো মিষ্টি কথায় বিদেয় করলেই ত দেখতে শুনতে ভাল হয়, আমরাও স-মানে চলে যাই। উঃ—উনি শুনলে একেবারে আকাশ থেকে পড়বেন। যাকে তাকে বলে বেড়ান, আমাদের বৌঠাকুরুন মানুষ নয়—সাক্ষাৎ ঠাকুর দেবতা।
সিদ্ধেশ্বরী কাঁদিয়া ফেলিলেন। রুদ্ধস্বরে বলিলেন, এমন অপবাদ আমার শত্তুরেও দিতে পারে না মেজবৌ। এ-সব কথা ঠাকুরপোকে শোনানোর চেরে আমার মরণ ভাল। তোমরা এসেচ বলে আমার কত আহ্লাদ—আমার কানাই পটলকে আনো, আমি তাদের মাথায় হাত দিয়ে—
কথাটা শেষ হইল না। শৈল একবাটি দুধ লইয়া ঘরে ঢুকিয়া বলিল, আহ্নিক হয়েচে? একটু দুধ খাও দিদি।
সিদ্ধেস্বরী কান্না ভূলিয়া চেঁচাইয়া উঠিলেন, বেরো আমার সুমুখ থেকে দূর হয়ে যা!
হঠাৎ শৈল থতমত খাইয়া চাহিয়া রহিল।