সিদ্ধেশ্বরী কঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, তোর যা মুখে আসবে তাই লোককে বলবি কেন?
কাকে কি বলেচি?
সিদ্ধেশ্বরী এ প্রশ্ন কানেও তুলিলেন না, তেমনি চেঁচাইয়া বলিতে লাগিলেন, আমাকে বলে বলে তোর মুখ বেড়ে গেছে—কে তোর কথার ধার ধারে লা? সবাইকে তুই দিদি পেয়েচিস? দূর হ আমার মুখ থেকে।
শৈল সহজভাবে বলিল, আচ্ছা আচ্ছা, দুধ, খেয়ে নাও, আমি যাচ্ছি। এ বাটিটায় আমার দরকার।
তাহার নিরুদ্বিগ্ন কথা শুনিয়া সিদ্ধেশ্বরী অগ্নিমূর্তি হইয়া উঠিলেন, খাবো না, কিছু খাবো না, তুই যা। হয় তুই বাড়ি থেকে বেরো, না হয় আমি বেরোই—দুটোর একটা না করে আমি জলস্পর্শ করব না।
শৈল তেমনি সহজ গলায় বলিল, আমি এই সেদিন এসেচি দিদি এখন যেতে পারব না তার চেয়ে বরং তুমিই গিয়ে আর দিনকতক কাটোয়ায় থাক গে কাছেই গঙ্গা—অমনি বা’র করে নিয়ে গেলেই হবে। আচ্ছা মেজদি, কি তুচ্ছ কথা নিয়ে সকালবেলা তোলপাড় ক’চ্চ বল ত?
জ্বরে জ্বরে দিদি আধমরা হয়ে রয়েছে, ওঁকে কেন বিঁধচ? আমি যদি দোষ করে থাকি, আমাকে বললেই ত হয়—কি হয়েছে বল?
সিদ্ধেশ্বরী চোখ মুছিয়া হাসিয়া বলিলেন, আজ অতুলের জন্মদিন, কেন তুই বাছাকে অমন কথা বললি?
শৈল হাসিয়া উঠিল, ওঃ এই! কিছু ভয় করো না মেজদি—তোমার মত আমিও ত মা। আমার হরিহরণ, কানু, পটল যেমন, অতুলও তেমনি। মায়ের কথায় গাল লাগে না মেজদি; আচ্ছা, আমি তাকে ডেকে আশীর্বাদ করছি—নাও দিদি, তুমি খেয়ে নাও, আমি কড়া চড়িয়ে এসেছি।
সিদ্ধেশ্বরীর মুখে কান্নার সঙ্গে হাসি ফুটিয়া উঠিল, বলিলেন, আচ্ছা, তোর মেজদির কাছেও ঘাট মান, তুই তাকেও মন্দ বলেছিস।