মৌন হইয়া রহিল।
কিন্তু প্রতুলের আর ত চুপ করিয়া থাকা চলে না। কারণ, অপমানটাই এ ক্ষেত্রে তাহার একমাত্র ক্ষোভের বস্তু নয়, সে বিদেশ হইতে অনেক ফ্যাশন, অনেক কোট-প্যাণ্ট নেকটাই লইয়া ঘরে ফিরিয়াছে নানা রকমে অনেক উঁচুতে তুলিয়া নিজের আসন বাঁধিয়াছে, আজ ছোটখুড়ীমার একটা তিরস্কারের ধাক্কায় অকস্মাৎ সমস্ত ভাঙ্গিয়া-চুরিয়া একাকার হইয়া যায় দেখিয়া সে উৎকণ্ঠায় চঞ্চল হইয়া উঠিল। হরিদাকে উদ্দেশ করিয়া সরোষে বলিল, আমি কারো কথার ধার ধারিনে বাবা! এ শৰ্মা অতুলচন্দর―রেগে গেলে ও-সব ছোটখুড়ী-টুড়ী কাউকে কেয়ার করে না!
হরিচরণ এদিকে ওদিকে চাহিয়া ভয়ে ভয়ে প্রত্যুত্তর করিল, আমিও করিনে―চুপ, কানাই আসছে। পাছে নিৰ্বোধ অতুল উহারই সম্মুখে বীরত্ব প্রকাশ করিয়া বসে এই ভয়ে সে ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।
কানাই দ্বারের বাহিরে দাঁড়াইয়া মোঘল বাদশার নাকিবের মত উচ্চকণ্ঠে হাঁকিয়া কহিল, মেজদা, সেজদা, মা ডাকচেন―শিগগির।
হরিচরণ পাংশুমুখে কহিল, আমাকে? আমি কি করেচি! আমাকে কখ্খন নয়—যাও অতুল, ছোটখুড়ীমা ডাকচেন তোমাকে।
কানাই প্রভুত্বের স্বরে কহিল, দু’জনকেই―দু’জনকেই―এক্ষুণি―অ্যাঁ, সেজদা তোমার নতুন কোট মাটিতে ফেলে দিলে কে?
প্রত্যুত্তরে সেজদা শুধু মেজদার মুখের পানে চাহিল, এবং মেজদা সেজদার মুখের পানে চাহিল, কেহই সাড়া দিল না। কানাই ভূলুণ্ঠিত কোটটা চেয়ারের হাতলে তুলিয়া, দিয়া চলিয়া গেল।
হরিচরণ শুষ্ককণ্ঠে কহিল, আমার আর ভয় কি, আমি ত কিছু বলিনি—তুমি বলেচ ছোটখুড়ীমাকে কেয়ার কর না―
আমি একা বলিনি, তুমিও বলেচ, বলিয়া অতুল সগৰ্বে বাড়ির ভিতর চলিয়া গেল। ভাবটা এই যে, আবশ্যক হইলে সে সত্য কথা প্রকাশ করিয়া দিবে।