বলিয়া সিদ্ধেশ্বরী স্বামীর পায়ের উপরে সজোরে নাড়া দিলেন।
গিরীশ জাগিয়া উঠিয়া কহিলেন, নিশ্চয় না।
সিদ্ধেশ্বরী রাগ করিয়া বলিলেন, কেন নয়? মা বলেই যে ছেলেকে মেরে ফেলবে মহারানীর এমন কিছু হুকুম নেই। কালই যদি মেজঠাকুরপােকে দিয়ে উকীলের চিঠি দিই, কি হয় তা হলে?—বলিয়া সিদ্ধেশ্বরী উত্তরের আশায় ক্ষণকাল অপেক্ষা করিয়া প্রত্যুত্তরে স্বামীর নাসিকাধ্বনি শুনিয়া রাগ করিয়া উঠিয়া গেলেন।
সারারাত্রি তাঁহার লেশমাত্র ঘুম আসিল না। কখন সকাল হইবে, কখন হরিশকে দিয়া উকীলের চিঠি পাঠাইয়া ছেলের দাবী করিবেন, চিঠি পাইয়া তাহারা কিরূপ ভীত ও অনুতপ্ত হইয়া কানাই ও পটলকে রাখিয়া যাইবে, এই সমস্ত আশা ও আকাশকুসুমের কল্পনা তাঁহাকে সমস্ত রাত্রি সজাগ করিয়া রাখিল।
প্রভাত হইতে না হইতে তিনি হরিশের দ্বারে আসিয়া আঘাত করিয়া বলিলেন, মেজঠাকুরপাে, উঠেচ?
হরিশ ব্যস্ত হইয়া দ্বার খুলিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন।
সিদ্ধেশ্বরী কহিলেন, দেরি করলে চলবে না, এখখুনি ছােটঠাকুরপােদের নামে উকীলের চিঠি লিখে, দরােয়ান পাঠাতে হবে। তুমি বেশ করে একখানা চিঠি লিখে বলে দাও যে, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জবাব না পেলে নালিশ করা হবে।
হরিশকে এ বিষয় উত্তেজিত করা বাহুল্য। তিনি তৎক্ষণাৎ রাজী হইয়া, গলা খাটো করিয়া প্রশ্ন করিলেন, ব্যাপারটা কি বল দেখি বড়বৌ? বসাে, বসাে—কি কি নিয়ে গেছে? দাবীটা একটু বেশী করে দেওয়া চাই। বুঝলে না?
সিদ্ধেশ্বরী খাটের উপর আসন গ্রহণ করিয়া; দুই চক্ষু প্রসারিত করিয়া, তাঁহার দাবীটা বিবৃত করিলেন।
বিবরণ শুনিয়া হরিশের হর্ষোজ্জ্বল মুখ কালি হইয়া গেল। কহিলেন, তুমি কি ক্ষেপেচ বড়বৌঠান? আমি বলি, বুঝি আরকিছু। তাদের ছেলে তারা নিয়ে গেছে, তুমি করবে কি?