বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আছে রে এর মধ্যে। তুই আর আমি দু’জনে নেবো, আর কেউ না। খুব সন্দেশ খাবো।

 ঝড়ের ঝাপট আবার এল। আমরা তেঁতুলগাছের গুঁড়িটার আড়ালে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। তেঁতুলগাছে ভূত আছে সবাই জানে। কিন্তু ভূতের ভয় আমাদের মন থেকে চলে গিয়েছে। অনাদিনে আমাদের দু’জনের সাধ্য ছিল না এ সময় এ গাছতলায় বসে থাকি।

 বাদল বললে—শীতে কেঁপে মরছি। কি করা যাবে বল। বাড়ি কিন্তু নিয়ে যাওয়া হবে না। তাহোলে সবাইকে ভাগ দিতে হবে, সবাই জেনে যাবে। কি করবি?

 —আমার মাথায় কিছু আসছে না রে।

 —ভাঙ্গি তালা। ইট নিয়ে আসি, তুই থাক এখানে।

 —না। তালা ভাঙ্গিসনে। ভাঙ্গলেই তো গেল। অন্যায় কাজ হয় তালা ভাঙ্গলে, ভেবে দ্যাখ। কোন গরীব লোকের হয়তো। আজ তার কি কষ্ট হচ্ছে, রাতে ঘুম হচ্ছে না। তাকে ফিরিয়ে দেবো বাক্সটা।

 বাদল ভেবে বললে—ফেরত দিবি?

 —দেবো ভাবছি।

 —কি করে জানবি কার বাক্স?

 —চল সে মতলব বার করতে হবে। অধর্ম করা হবে না।

 এক মুহূর্তে দু’জনের মনই বদলে গেল। দু’জনেই হঠাৎ ধার্মিক হয়ে উঠলাম। বাক্স ফেরত দেওয়ার কথা মনে আসতেই আমাদের অদ্ভুত পরিবর্তন হোল। বাক্স নিয়ে জল ঝড়ে ভিজে সন্ধ্যার পর অন্ধকারে বাড়ি চলে এলাম। বাদলদের বাড়ির বিচুলি গাদায় লুকিয়ে রাখা হোল বাক্সটা।

 তারপর আমাদের দলের এক গুপ্ত মিটিং বসলো বাদলদের ভাঙ্গা নাটমন্দিরের কোণে। বর্ষার দিন—আকাশ মেঘে মেঘাচ্ছন্ন। ঠাণ্ডা

৯৯