বিধুর কাছে একজন লোক এল তারপরে। তারও বর্ণনা মিললে। না; বিধু তাকে বিদায় দিলে পত্রপাঠ। যাবার সময় সে নাকি শাসিয়ে গেল, চৌকিদারকে বলবে, দেখে নেবে আমাদের ইত্যাদি। বিধু তাচ্ছিল্যের সুরে বললে—যাও যাও, যা পারো করো গিয়ে। বাক্স আমরা কুড়িয়ে পাইনি। যাও।
আর কোনো লোক আসে না।
বর্ষা পড়ে গেল ভীষণ।
সেবার আমাদের নদীতে এল বন্যা।
বড় বড় গাছ ভেসে যেতে দেখা গেল নদীর স্রোতে। দু’একটা গরুও আমরা দেখলাম ভেসে যেতে। অম্বরপুর চরের কাপালীরা নিরাশ্রয় হয়ে গেল। নদীর চরে ওদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি সেবারেও দেখে এসেছি। কি চমৎকার পটলের আবাদ, কুমড়োর ক্ষেত, লাউকুমড়োর মাচা ওদের চরে! দু’পয়সা আয়ও পেতো তরকারি বেচে। কোথায় রইলো তাদের পটল কুমড়োর আবাদ, কোথায় গেল তাদের বাড়ি-ঘর। আমাদের ঘাটের সামনে দিয়ে কত খড়ের চালাঘর ভেসে যেতে দেখলাম। সবাই বলতে লাগলো অম্বরপুর চরের কাপালীরা সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। একদিন বিকেলে আমাদের চণ্ডীমণ্ডপে একটা লোক এল। বাবা বসে হাত-বাক্স সামনে নিয়ে জমাজমির হিসেব দেখছেন। গ্রামের ভাদুই কুমোর কুয়ো কাটানোর মজুরি চাইতে এসেছে! আরও দু’একজন প্রজাপত্তর এসেছে খাজনা দিতে। আমরা দু’ভাই বাবার কড়া শাসনে বইয়ের পাতা ওলটাচ্ছি। এমন সময়ে একটা লোক এসে বললে—দণ্ডবৎ হই, ঠাকুরমশায়।
বাবা বললেন—এসো। কল্যাণ হোক। কোথা থেকে আসা হচ্ছে?
—আজ্ঞে অম্বরপুর থেকে। আমরা কাপালী।
—বোসো। কি মনে করে? তামাক খাও। সাজো।
লোকটা তামাক সেজে খেতে লাগলো। সে এসেছে এ গাঁয়ে
১০২