বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিয়ে ঝিঞের ঝাল (তরকারি হিসেবে অদ্ভূত শুধু নয়, বিকট), বাগুন দিয়ে পেঁজ দিয়ে, কাঁচানংকা আর তেঁতুল। তা বেশ খ্যালাম—কি বলো?

 —বেশ খেয়েচ, আবার কি খাবে?

 কোনোদিন জিজ্ঞাসিত না হয়েও একগাল হেসে বলতো—দাদাঠাকুর, আজ খুব খ্যালাম—

 —কি ও গণেশদাদা?

 —কি বল দিনি?

 গণেশদাদা সকৌতুকে আমার দিকে তাকায়।

 —তা কি জানি? তুমি বলো!

 —আজ তোমার বউদিদি বড্ড করেল। উস্তের (উচ্ছে) শাক আর দয়াকলা দিয়ে একটা তরকারি আর পান্ত ভাত।

 খাবারটা লোভনীয় বলে মনে না হোলেও মৌখিক তারিফ না করে উপায় নেই গণেশদাদার কাছে।

 খাওয়ার তো এই দশা—পরণে ময়লা ছেঁড়া কাপড় কিংবা গামছা ছাড়া আমি তো গণেশদাদার ছবি মনেই করতে পারিনে। অথচ... ব্রাহ্মণপাড়ার অর্ধেক কাজে গণেশকে না হোলে চলেই না। বেশির ভাগই ব্যাগার।

 —ওরে গণশা, আজ উঠোনের কাঠগুলো ঘরে তুলে দিয়ে আসিস তো?

 —গণশা, গাছের নারকোলগুলো পেড়ে দিতে হবে ওবেলা।

 —গরুটো পণ্টে গিয়েচে রে, তুই দুপুরবেলা একবার এসে গরুটো আজ এনে দিবি—বুঝলি?

 —গণশা, আমার গাছের দুকাঁদি কাঁচকলা হাট থেকে বিক্রি করে দিতে হবে বাবা—

 শুধু মিষ্টিকথা—ব্যাস্। ঐ পর্যন্ত! কখনো গণেশদাদা মুখ ফুটে একটা পয়সা মজুরি এ সব ফাইফরমাশ খাটার জন্যে চাইতো না।

১১০