বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —ভাল আছ, হ্যাঁ গণেশদাদা?

 —হ্যাঁ ভালো। তোমরা সব ভালো?

 গণেশদাদাকে এই বয়সে গরু চরাতে দেখে আশ্চর্য হলাম। কারণ পল্লীগ্রামে গরু চরানো হোল বিষয়কর্মের প্রথম সোপান। সাধারণতঃ বালকেরা এ কাজ করে থাকে—তারপর ক্রমোন্নতির ধাপে ধাপে উঠতে শুরু করে। মোটামুটি সেটা এই রকম:—

 ১। গরু চরানো (১৭ বছর বয়েস পর্যন্ত)

 ২। জন খাটা (১৬/১৭ থেকে ত্রিশ বছর বয়েস পর্যন্ত)

 ৩। অপরের কৃষাণগিরি করা (২৫।৩০ থেকে চল্লিশ পর্যন্ত)

 ৪। নিজের জমিতে চাষ আবাদ করা (এ সৌভাগ্য সকলের ঘটে না)

 ৫। বাড়িতে ধানের গোলা বাঁধা (যেমন অনেকেই ব্যবসা করে কিন্তু ধনী হতে পারে না, তেমনি চাষ অনেকেই করে কিন্তু গোলা বাঁধতে পারে না। এ সৌভাগ্য ক্বচিৎ ঘটে চাষীর ভাগ্যে)

 ৬। কিন্তু এ লিখচি কেন, এ ভাগ্য সকলের হয় না—ব্যবসাদার মাত্রেই কি টাটা-বিড়লা হয়? তবুও এটার উল্লেখ করতেই হবে—প্রত্যেক চাষীর স্বপ্ন, প্রত্যেক রাখালের অলস- মধ্যাহ্নের স্বপ্ন, প্রত্যেক দিন-মজুরের বর্ষা-দিনে এক হাঁটু জল-কাদায় ধান বপন করতে করতে ক্লান্তি অপনোদনের স্বপ্ন—এটি উল্লেখ না করলে চলবে না। সেটি হোল নিজে মহাজন হয়ে নিজের গোলা থেকে অপরকে ধান কর্জ দেওয়া।

 এই উচ্চতম ষষ্ঠ স্তর প্রাপ্তি বহু পুণ্যের ফলে ঘটে।

 যাক্, কিন্তু গণেশদাদা এই বয়েসে বিষয়কর্মের প্রথম সোপানটিতে কেন, এ প্রশ্ন আমার মনে না উঠে পারলো না। পাড়াগাঁয়ে এই বয়সেও যারা গরু চরায়, বুঝতে হবে তারা ভাগ্যলক্ষ্মী দ্বারা নিতান্তই অবহেলিত, তারা নিতান্তই অভাজন। এ প্রশ্ন গণেশদাদাকে করলাম না, যদি ও মনে কষ্ট পায়। আমার কিন্তু মনে বড় কষ্ট হোল

১১২