বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —এখনো দানা পুরুষ্ট হয়নি, আর চার পাঁচটে রোদ খাক্‌। সময় হলি ব-অ-ল-বো—

 এই সময় নদীপপুরের গোপেশ্বর বৈরাগীকে মাঠের পাশের পথ দিয়া মাথার টোকাটা কপালের উপর দুই আঙ্গুল দিয়া একটু উঁচু করিয়া তুলিয়া বলিলেন—ও গোপেশ্বর—শোনো—গোপেশ্বর—

 গোপেশ্বর আসিয়া বলিল—সেলাম সায়েব—

 সাহেবের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এ অঞ্চলে, কারণ অধিকাংশই তাহার প্রজা।

 —যাচ্চ কনে?

 —যাবো একবার পানচিতে। মেয়ের খবর পাইনি অনেক দিন। জামাইডা কেমন আছে দেখে আসি, পেট জোড়া পিলে তার। গত অঘ্রান মাসে যায় যায় হইছিল—

 —ম্যালেরিয়া?

 —তা আমরা কি বুঝি? তাই হবে।

 —বেশ। একটা কৃষ্ট বিষয় গান করে শুনিয়ে যাও দিকি?

 —কৃষ্ট বিষয়?

 —কিংবা শ্যামা বিষয়। না, তুমি বোষ্টম টুম টুম আবার বুঝি শ্যামা বিষয় গাইবা না। ঝা মন চায় একখানা শোনাও। বড্ড রোদ পড়চে, শরীলির কষ্ট হয়েছে বড্ড। বোসো, এই পিটুলিতলায় ছাওয়া পানে।

 গোপেশ্বর গান গাহিতে বসিয়া দুবার কাশিল, সাহেবের দিকে লাজুক দৃষ্টিতে দু’ একবার চাহিয়া পরে গান আরম্ভ করিল—

কোনটি তোমার আসল রূপ শুধাই তোমারে—

 ফালমন্ সাহেব হাতে তালি দিতে দিতে বলিলেন—বাঃ বাঃ বেশ গলা—দাশুরায় না নীলকণ্ঠ?

 —নীলকণ্ঠ।

 —দাশুরায় একখানা হোক না?

১৪