সেকালের নীলকুঠির অটোক্র্যাট্ ভূম্যধিকারীর রক্ত ছিল ফালমন্ সাহেবের গায়ে, প্রজা পীড়ন ও শোষণে তিনি তেমনি পটু, তবে যুগপ্রভাবে নখ-দন্ত অপেক্ষাকৃত ভোঁতা—এইমাত্র।
সেবার মস্ত বড় দাঙ্গা বাধিল বাগদী ও জেলে প্রজাদের মাৎলার বিলের দখল লইয়া। মাৎলার বিল বরাবর বাগদী প্রজাদের কাছে বন্দোবস্ত করা ছিল রানী রাসমণি এষ্টেটের স্বরূপনগর কাছারী থেকে। কখনো এক পয়সা খাজনা আদায় হইত না। মামলা মোকর্দমা করেও কিছু হয় না—তখন রানী এষ্টেটের নায়েব ভৈরব চক্রবর্তী মাৎলার বিল দশ বৎসরের জন্য ইজারা দিলেন ফালমন্ সাহেবকে। সেলামি এক পয়সাও নয়, কেবল শালিয়ানা আড়াইশো টাকা খাজনা। কারণ দুর্ধর্ষ জেলে ও বাগদী প্রজাদের কাছ থেকে বিলের দখল পাওয়াই ছিল সমস্যা—সাহেবের দ্বারা সে সমস্যা পূরণ হইবে, ভৈরব চক্রবর্তীর এ আশা ছিল এবং সে আশা যে নিতান্ত ভিত্তিহীন নয় বিল ইজারা দেওয়ার এক পক্ষ কালের মধ্যেই পদ্মফোটা মাৎলা বিলের রক্ত-রঞ্জিত জল তার প্রমাণ দিল। প্রকাশ ফালমন্ সাহেব স্বয়ং টোকা মাথায় দিয়া ঘোড়ায় চড়িয়া দাঙ্গা পরিচালনা করিয়াছিলেন। যদিও পুলিশ রিপোর্টে পরে প্রকাশ হইল, দাঙ্গার সময় ফালমন্ সাহেব তঁর বড় মেয়ে মার্জারির টন্সিল অস্ত্র করিবার জন্যে তাহাকে লইয়া কৃষ্ণনগর মিশন হাসপাতালে যান।
মামলাবাজ ও-ধরনের আর একটি লোক সারা জেলা খুঁজিলে পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ।
প্রায়ই মহকুমায় মামলা থাকিত।
সাহেবের চারদাঁড়ের ডিঙি সাতটার সময় ছাড়িত কুঠিঘাট থেকে। ছইয়ের মধ্যে ফালমন্ সাহেব ও তাঁর খাওয়ার জন্যে ফলের ঝুড়ি, জলের কুঁজো, দুধের বোতল, নায়েব ষড়ানন বাবু ও তাঁর বিছানাপত্র, দুজন মাঝি (তার মধ্যে একজনের নাম গোপাল পাইক, জাতে বাগদী, খুব ভাল গান গাহিতে পারে)—এই লইয়া
১৭