বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তীরবেগে নৌকা ছুটিত দশ মাইল দূরবর্তী মহকুমার সহরের দিকে। হু হু করিয়া মুখোড় বাতাস বহিত। গাঙে সাহেবের প্রিয় অনুচর গোপাল পাইক প্রভুর ইঙ্গিতে নৌকার গলুইয়ের কাছ থেকে ছইয়ের কাছে সরিয়া আসিত। সাহেব বলিতেন—একটা কৃষ্ণ বিষয় কিংবা শ্যামা বিষয় গাও গোপাল—

 গোপাল অমনি ধরিত—

নীল বরণী নবীনা রমণী নাগিনী জড়িত জটা সুশোভিনী
নীল নয়নী জিনি ত্রিনয়নী কিবা শোভে নিশানাথ নিভাননী—

 তারপর গাহিত—

কি কর কি কর শ্যাম নটবর, ছাড় যাই নিজ কাজে—

 গোপাল পাইক যাত্রাদলে অল্প বয়সে গাহিত, সাহেবের সঙ্গীতপ্রিয়তার কথা শুনিয়া কিঞ্চিৎ পুরস্কার আশায় একদিন সে নীলগঞ্জের কুঠীতে গাহিতে আসে—গান শুনিয়া সাহেবের বড় ভাল লাগিল এবং সেই হইতে গোপাল সাহেবের এষ্টেটের চাকুরীতে বহাল হইয়া গেল।

 এক পয়সা খাজনা বাকি থাকিলেও যেমন সাহেবের এষ্টেট হইতে নালিশ হইত, আবার ধরিয়া পড়িলে ক্ষমা করিতেও ফালমন্ সাহেব ছিলেন বিশেষ পটু। কতবার এরকম হইয়াছে। দুর্বুদ্ধি প্রজা ভবিষ্যৎ না ভাবিয়া কিংবা উকিল মোক্তারদের উৎসাহে নীলগঞ্জ এষ্টেটের বিরুদ্ধে মামলা লড়িয়াছে। একবার ফৌজদারী, তারপর স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী দেওয়ানী, মহকুমা হইতে সব্-জজকোর্ট, সেখান হইতে আবার পুনর্বিচারের জন্য মহকুমার মুন্সেফকোর্ট—এই করিতে করিতে প্রজা এষ্টেটকে হয়রান করিয়া এবং নিজেও সর্বস্বান্ত হইয়া যখন জ্ঞান-চক্ষু লাভ করিল, তখন হিতৈষী বন্ধুদের পরামর্শে কোর্টের বটতলাতেই একেবারে ফালমন্ সাহেবের পা জড়াইয়া উপুড় হইয়া পড়িল পায়ে।

 —আরে কি কি কি?

১৮