বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বরো আমার পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা ক’রে বললে—সে বাবু আর আপনার সামনে বলবো না।

 একটু এগিয়ে গিয়ে পেছন ফিরে আমার দিকে চেয়ে বললে—ওনার মতিগতি ভাল না বাবু, এই একটা কথা আপনাকে বললাম—

 বরো চলে গেল।

 ব্যাপার কি?

 মুখুয্যে কাকা কি বরো বাগদিনীর কাছে প্রেম করতে গিয়েছিলেন? উভয়ের এই বয়সে? বিশ্বাস তো হয় না। করুকগে, পরের কথায় দরকার কি আমার!

 পৌষমাসের প্রথমেই ভীষণ শীত পড়লো।

 একদিন রাত দশটার পর ওপাড়ার হাজারি ঘোষের বাড়ি থেকে ভাগবতের কথকতা শুনে ফিরচি এমন সময় পায়ে-চলা মাটির পথের ধারে একখানা কুঁড়ে ঘরের দাওয়ায় কে শুয়ে আছে দেখে সেখানে থমকে দাঁড়ালাম।

 এ পাড়ায় আমার যাতায়াত খুবই কম। তার ওপর বহুকাল গ্রামে না থাকার দরুণ কোন্‌টা কার বাড়ি চিনিনে। এগিয়ে গিয়ে বললাম—শুয়ে কে?

 —কে, বাবু? আসুন। কনে গিয়েলেন এত রাত্তিরি? আমি বরো।

 —ও, এই তোমার বাড়ি নাকি?

 —হ্যাঁ বাবু। এরে কি আর বাড়ি বলে। ওই কোনো রকমে আছি মাথা গুঁজে। গরীব নোকের আবার বাড়ি আর ঘর। আপনিও যেমন!

 সত্যি অবাক হ’য়ে গেলাম। কেউ বললে বিশ্বাস করবে না। ছোট্ট একখানা চার চালা ঘর, ঘরের পেছন দিকে দেওয়াল নেই, কঞ্চির বেড়া বা চাঁচ কিছুই নেই—একেবারে ফাঁকা। সামনের যে দাওয়ায় বরো বাগদিনী এতক্ষণ শুয়েছিল তার দুদিকে নোনার পাতার

২৬