দেখে না। এ বছর উপদ্রবটার বাড়াবাড়ি দেখা গেল। দিনদুপুরে দক্ষিণ মাঠের বেগুনের ক্ষেতে কি নয়ালি দীঘির পাড়ের জঙ্গলে কি চুয়োডাঙ্গার রাস্তার অশ্বত্থ গাছের তলায় বাঘকে শুয়ে থাকতে দেখে চাষী কি পথ-চলতি লোকে। ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাতে ইচ্ছামতীর ধারের বাঁশবনের পথ দিয়ে সীতে জেলে মাছ ধরে নিয়ে তেঁতুলতলার ঘাট থেকে বাড়ি ফিরচে, মস্ত বড় বাঘ (অবিশ্যি সীতে জেলের বর্ণনানুসারে) রাস্তা জুড়ে শুয়ে আছে। জনপ্রাণী নেই তেঁতুলতলার ঘাটের পথে, বাঘও নড়ে না—সীতে জেলের ন যযৌ ন তস্থৌ অবস্থা—তারপর বাঘটা হঠাৎ লাফ দিয়ে পাশের ঝোপে কেন পালিয়ে গেল সেই জানে। একদিন তো আমারই বাড়ির পেছনে বাঁশবনে সন্ধ্যা রাতে ফেউ ডাকতে সুরু করলো। হাট থেকে ফিরবার পথে বরো বাগদিনীর ঘরের পাশ দিয়ে এলাম ওকে বাঘের কথাটা বলে সতর্ক করে দেবার জন্যে।
জ্যোৎস্না উঠেছে, সন্ধ্যার অল্প পরেই। তেমনি শীত।
বরো দেখি দাওয়ায় শুয়ে আছে, মাথার কাছে একটু করে ঘুঁটের আগুন। একেবারে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
—কি বরো, এত সকালে শুয়ে পড়েছ?
—বাবু? আসুন, বড্ড জ্বর এয়েল দুপুর বেলা। আজ আৱ হাটে যেতে পারিনি। চটখানা মুড়ি দিয়ে পড়ে আছি।
—তোমাকে এলাম একবার সাবধান করে দিতে। বাইরে এরকম শোয়া ঠিক না। কাল তো আমার বাড়ির পেছনের বাগানে বাঘ ডেকেছে। তোমার ঘর আরও বনের মধ্যে—
—বাবু, কিছু হবে না। বাঘে মোদের কি করবে? ও ভয় নেই মোদের। তা থাকলি কি আর বারোমাস এই ফাঁকা জায়গায় শুতে পারি? ও মোদের সয়ে গিয়েছে। ভয় ডর থাকলি কি মোদের চলে?
একদিন পরের কথা।
২৮