পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকালবেলা হৈ হৈ ব্যাপার। সবাই ছুটচে। ওপাড়ার দিকে। বরো বাগদিনীকে নাকি শেষরাতে বাঘে মেরেচে। সঠিক খবর কেউ দিতে পারে না । ব্যাপার কি দেখবার জন্য ছুটলাম ওপাড়ার দিকে। গিয়ে দেখি বরো বাগদিনীর ঘরের উঠানে লোকে লোকারণ্য । বরো বাগদিনীর গলা সকলকে ছাপিয়ে উঠেছে। সে হাত পা নেড়ে কি একটা বৰ্ণনা করাচে সকলের সামনে । আর সেই জনমণ্ডলীর মাঝখানে বরো বাগদিনীর দাওয়ার ঠিক সামনের উঠানে একটা বড় গুল-বাঘ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বরো বাগদিনী নাকি বাঘটাকে গত শেষরাত্রে কাস্তে বঁটি দিয়ে মেরেচে। জিগ্যেস করলাম-কাস্তে বঁটি দিয়ে অত বড় বাঘটাকে-? তখন বরো আবার আমার দিকে ফিরে তার কাহিনী গোড়া থেকে সুরু করলে। সত্যিই সে বাঘটা মেরেচে। এবং বঁটি দিয়েই মেরেচে। শেষবাত্রে বাঘটা ওর ঘরের পেছনে এসে হাক পাড়ে। বরোর ছেলে ঘর থেকে ভয়ে চীৎকার করে উঠতেই বরোর ঘুম ভেঙে যায় । ছেলেকে বাঘে ধরেচে ভেবে ও দাওয়ার কোণ থেকে কান্তে বঁটি নিয়ে বাঘের ঘাড়ে পড়ে। বাঘ আসলে তখন ধরেচে। ওদের সেই ধাড়ি ছাগলটাকে । অন্ধকারে দেখাই যাচ্ছে না বাঘে ছাগল ধরেচে। না ছেলে ধরেচে। কাস্তে বঁট দিয়ে বাঘের ঘাড়ে মরীয়া হয়ে নিৰ্ঘাত ঘা কতক কোপ দিতে বাঘ সেখানেই ঘাড় কাত করে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়—এই হোল বরো বাগদিনীর বর্ণনা। ভিড়ের মধ্যে মুখুয্যে কাকা ছিলেন, তিনি বললেন—তোর একটুও ভয় করলে না। ওর সামনে যেতে ? বিরো বললে-মোর কি তখন জ্ঞান ছিল, দাদাঠাকুর ? মোর আজ দুদিন জ্বর। ওই উনি (আমার দিকে আঙুল দিয়ে) পরশু দেখে গিয়েলেন। বাঘ হ্যাকোর হঁ্যাকোর করে উঠলে তাও শোনলাম জ্বরের ঘোরে, মোর ছেলে চীৎকার করে উঠলো, তাও শোনলাম । জ্বরের ঘোরে ভাবলাম মোর RS