সময়, খড়খড় শব্দ করচে তালগাছে দোদুল্যমান বাবুই পাখীর বাসা। উঁচু পাড় বেয়ে উঠতে ডানধারে এক বিরাট ঝোপ, তার মাথায় মাথায় মটরলতার ঝোপ, আঙুরলতার ঝোপ। কাবুলী আঙুর নয় অবিশ্যি, আমাদের বনে এক রকম অতি সুদৃশ্য লতা বর্ষায় গাছের মাথা বেয়ে গজিয়ে উঠে নিবিড় ঝোপের সৃষ্টি করে, আঙুরের মত খাঁজকাটা পাতা, আঙুরের মত থোকো থোকো ফল ধরে লতার গাঁটে গাঁটে। মটর লতাও যাকে বলচি, মটরের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই—ওকে বলে বড় গোয়ালে লতা, মটরের মত ছোট ছোট চমৎকার ফল গুচ্ছ গুচ্ছ দুলচে লতাগ্রভাগে, সবুজ কচি পত্রসম্ভার বুনো যজ্ঞিডুমুর গাছের তলায় নিবিড়তার সৃষ্টি করেচে।
আমি ভালবাসি এ ধরনের সম্পূর্ণ বন্য গাছঝোপ দেখতে, নইলে বিহারে চাকুলিয়া মিলিটারী ক্যাম্পের লোহার বেড়ায় দেখেচি পটপটি-লতার ফুল—সে আমার ভাল লাগেনি, কেননা তার পাশেই রয়েচে ট্যাঙ্ক, মোটর, ট্র্যাক্টর প্রভৃতি জিনিস—যার পাশেই অদূরে রয়েছে বম্বার প্লেনের সারি। এখানে সে সবের বালাই নেই। নিভৃত লতাবিতান ও কাননভূমি ও পল্লীনদীর শান্ত তীর, মানুষের উগ্রলোভ ও অর্থোপার্জনের জন্য নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এর জন্যে পটভূমিকা রচনা করেনি।
তারপর যে কথা বলছিলাম।
স্নান করে ঝোপটির কাছে এসে দাঁড়ালাম।
বেশ চমৎকার লাগছিল।
হঠাৎ নিজের মন সংযত করে নানাদিক থেকে মনকে কুড়িয়ে এনে চুপ করে দাঁড়ালাম। ঠিক যেন দেবদর্শনে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটা জগৎ যেন দেখতে পেলাম ঝোপের মধ্যে উঁকি দিয়ে। এতক্ষণ কোথায় কি পাখি ডাকছিল সেদিকে মন দিইনি। এই সময় ঝোপের গভীর অন্তঃপ্রদেশ থেকে একটা পাখী শুনলাম থেকে থেকে ডাকচে—অনেকক্ষণ থেকেই ডাকচে, বহুদূর থেকে ঘুঘুর ডাক ভেসে আসচে
৩২