মেঘশীতল আকাশের তলা বেয়ে। মন সমস্তটা কুড়িয়ে এনে যেমন এই ঝোপের দিকে দিয়ে একমনে দাঁড়ালাম, অমনি এই সব সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠলাম। অমনি ঝোপের মধ্যে উঁকি মেরে সেই অদ্ভুত, অপূর্ব জগৎটাকে দেখতে পেলাম।
যে জগৎ কি আমি বর্ণনা করতে পারি?
এত সূক্ষ্ম, এত অদ্ভুত ধরনের জগৎ এ!
যে জগতে শুধু বনকলসীর গায়ে বেগুনি ফুল ফোটে, টুকটুকে মাকাল-ফল দোলে, মটর ফলের লতায় টুনটুনি পাখী বসে গান করে, বর্ষার সজল প্রভাতে যজ্ঞিডুমুরের পাকা ফল টুপ টুপ করে মাটিতে পড়ে, বনকুসুমের গন্ধ ভেসে আসে—বহুদূরের জগৎ অথচ খুব নিকটের—কিন্তু সে নিভৃত, নিরালা জগৎ অতি নিকটে থাকলেও চেনা যায় না, দেখা যায় না, দৃষ্টির অতীত, স্পর্শের অতীত কোন অনুভূতির রাজ্যে তার অবস্থান ধরা দেয় না কিছুতেই। কি অবর্ণনীয়, গাঢ় শান্তি ও অপরূপ সৌন্দর্য বহন করে আনে দূর-থেকে দেখা তার মনোমোহিনী রূপ। তার বর্ণনা ভাষায় দেওয়া যায় না, কতকগুলি প্রতীক দিয়ে তাকে একটুকু বোঝানো যায় কি না যায়! অন্তর্মুখী মন সে জগৎকে একটু স্পর্শ করে যায় মাত্র—সে জগৎকে দেখতে পেলে মনের উদ্বোধনের নব দ্বারপথে উঁকি দিতে হয়, তবে যদি ধরা পড়ে! আরও কত কি রহস্যময় কথা শোনায় এ জগতের পত্রমর্মরে। মন কোথায় নিয়ে যায় সীমাহারা সৌন্দর্যের রাজ্যে, দৈনন্দিন ক্ষুদ্রত্ব ও বন্ধন থেকে মুক্তির সন্ধান যোগায়—যে-মুক্তি নিরাসক্তির অমরত্বে ঐশ্বর্যশালী, প্রতিদিনের পরিচিত জগতের বহু দূরে যে লোকাতীত লোকের বাণী মাঝে মাঝে দু’একজন মানুষের কানে এসে পৌঁছায়।
কতক্ষণ অবাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।
তখনও সেই নিভৃত, গুপ্ত জগৎ আমার চোখের সামনে ঝলমল করচে মৌন আমন্ত্রণের মুখরতায়। কিন্তু স্কুলের বেলা হয়ে গেল, দাঁড়ানোর উপায় নেই আমার। মনটাকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে
৩৩