বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আলি বললে—কত বিক্রি হোল গো?

 —সাত টাকা পাঁচ আনা।

 —পানবিড়ি?

 —বিস্কুটও আছে।

 —আছে দু’ একখানা? বড্ড খিদে পেয়েল। খ্যাতাম।

 —না আলি দা। গুঁড়োগাঁড়া পড়ে আছে টিনি। সে আর তোমারে দেবো না।

 গোপীনাথ বৈরাগী ঘুনসি চিরুনি কাঠের মালা বিক্রি করে। সে বললে—হাট আর সে যুতের নেই বামুন দা। এই গরীবপুরের হাটে আগে আগে পাঁচ টাকার কম হাট থেকে ফিরতাম না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়েচে দুই তিন—আজ ন’ সিকে। এতে মুনফা কি পাই আর পেট চালাই কি দিয়ে। সাড়ে তিন টাকা সরষে তেলের সেী। পয়সা লোট্‌চে আলি ভাই—

 আলি বললে—কি আর লোট্‌লাম? মনসুর বনগাঁর বাজারে বসে, একডালা খয়রা আর একডালা পুবে চিংড়ি—রোজ সতেরো টাকা আঠারো টাকা মুনফা—আমার সেই জায়গায় সাত আট—বড্ড জোর নয়।

 —উঃ রে মুনফা!

 —বড্ড হোল?

 —আমরা তো ধারণা কত্তি পারিনে—

 —পারবা কি করে। ঘুনসি কাঠের মালা ক’জন লোকে কেনবে? ও না হলিও লোকের চলে যাবে। কিন্তু মাছ না খেলি মুখে ভাত ওঠবে কি দিয়ে সেটা বোঝো। এই শীতি মাছ না খেলে মানুষ বাঁচে?

 হঠাৎ আমি বলে উঠলাম—চুপ চুপ ওই শোনো—

 সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে চারিপাশে। সামনে একটা রেলের ছোট সাঁকো। তার দুদিকে জলাভূমি, জলার ধারে জঙ্গল বেজায় ঘন। সেই জঙ্গলের মধ্যে একটু দূরে ফেউ

৩৬