বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ডাকচে। ক’দিন ধরে আমাদের এ অঞ্চলে বাঘের উপদ্রব হয়েচে। প্রায়ই এ গ্রাম ও গ্রামে গরু ছাগল ধরে নিয়ে যায়। সামনে পড়লে মানুষকে কি আর ছাড়ে?

 আলি সভয়ে বলল—কোথায়?

 —রেলের পুলের ধারে জঙ্গলে—

 —দাঁড়াও সব।

 গোপেশ্বর এগিয়ে এসে বললে—চলো চলো, ও কিছু নয়—এতগুলো লোককে বাঘ ধরচে না—চলো—

 বাঘের জলা পার হয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম। মধু জেলে ছেলেমানুষ, তার ভয় হয়েচে। সে বললে—রায় কাকা বাবু, মোরে মাঝখানে করে ন্যাও—

 আমি ধমক দিয়ে বললাম—নে, আচ্‌কান! বিশ বছরের ধাড়ির ভয় দ্যাখো—শীতকালে ফি বছর বাঘ আসে, জানো না?

 মধু বললে—না, পায়ে পড়ি মোরে এট্টু মাঝখানে ন্যান্—মোর গা ডোল দিয়ে উঠেচে—এই দেখুন হয় না হয়—

 —এত ভয় তোর? হাট কত্তি আসিস কেন? মার আঁচল ধোরে বসে থাক গে।

 কথাটা বললে আলি নিকিরি।

 মধুকে মাঝেই নেওয়া হোলো সবার কথায়।

 মধুর ভয় তখনো যায়নি। বললে—রাত্তিরি ছ’টা পয়সা বাঁচাবার জন্যি এল গাড়িতি না গিয়ে হেঁটে এ্যালেন সবাই কিন্তু ভাল কাজ করলেন না। আজ মঙ্গলবার অমাবস্যে— সেবার মুই আলেয়া ভূত দেখেলাম চাতরাবাগির বিলি—

 আলি বললে—বিলির জলে?

 —না গো। বিলির জলের ধারে। জ্বলচে নিবচে জ্বলচে নিবচে—

 গোপেশ্বর বললে—যাকগে। রাত্তির কালে ওই সব—রাম, রাম, রাম, রাম—

৩৭