আমি অতি কষ্টে হাসি চেপে রেখেচি। এ দলের মধ্যে সাহসী আলি নিকিরি, তার পরেই আমি; ভূতটুতের ধার ধারিনে। মধু ছেলেমানুষ, ওর না হয় ভয় হওয়া সম্ভব—কিন্তু গোপেশ্বর বোষ্টম আধবুড়ো লোক, ওরও ভয়! হাসি পায় বৈকি।
এর পরে নানারকম ভূতের গল্প উঠলো। জলার মধ্যে নক্ষত্র জ্বলচে, কাশবনে, খড়বনে শেয়াল ডাকচে। শ্যাম-লতার সাদা ফুল অন্ধকারে দেখা যাচ্চে ঝোপে ঝোপে, মিষ্টি গন্ধ বেরুচ্চে। ঝিঁঝিঁ ডাকচে পায়ের তলায় ঘাসবনে।
আলি নিকিরি মাছের ব্যবসার গল্প করছে। এবার ও পাঁচপোতার বিল জমা নেবে, আশিখানা কোমড় আছে। এক এক কোমড়ে দু মণ মাছ হবে। গোপেশ্বর জিগ্যেস করলে—কোমড় যে পেতেছিল, সে মাছ তোলেনি তা থেকে?
আলি বললে—কি করে ধরতি পারবে? অত জলে আর কচুরিপানার দামে বোঝাই বিলির মধ্যি মাছ! অত সোজা না মাছ ধরা!
গোপালনগর ইষ্টিশান এল, ওরা রেলের বেড়া টপকে অন্য রাস্তায় চলে গেল। আমি এবার একা। ইষ্টিশান ছাড়িয়ে দুধারে জঙ্গল বড্ড ঘন। আমার ভয় ডর নেই, অত বনজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একাই যাচ্চি, নানারকম অপদেবতার গল্প শুনেও। রায়পুরের রাস্তাটা যেখানে রেল লাইনের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল, সেখানটাতে জঙ্গল বড্ড ঘন।
হঠাৎ আমি থমকে দাড়িয়ে গেলাম।
ওটা কি জঙ্গলের মধ্যে সাদা মত! নড়চে! একটা কুস্বরও কানে গেল! সর্বনাশ! এখন উপায়? আমার গলা কাঠ হয়ে গেল। হাত পা যেন জমে হিম বরফ হয়ে গিয়েচে।
কানে গেল কে যেন ক্ষীণ দুর্বল স্বরে কি বলচে। আমার শরীর দিয়ে যেন ঘাম বেরিয়ে গেল। এ তো মানুষের গলা। ভুতে শুনেচি নাকি সুরে কথা কয়।
৩৮