মুস্কিল! জল পাই কোথায়? জলের পাত্রই বা কোথায় এখানে। রাইপুর গ্রাম এখান থেকে আধ ক্রোশ দূর। সেখান থেকে জল আনতে হবে।
যদি না আনি ও তেষ্টায় মরে যাবে। চলে গেলাম সেই অন্ধকারের মধ্যে রাইপুর। কুমোর বাড়ি থেকে একটা কলসী কিনে পাঁচু তরফদারের টিউব-কল থেকে জল পুরে আবার নিয়ে আসি রেল রাস্তার ধারে। ওর কাছে কলসী এনে দেখি সে ক্ষীণ সুরে কাতরাচ্চে। জল খাবার জন্যে কিছু আনা হয়নি, ভুল হয়ে গিয়েছে। কলসীটা ওর পাশেই বসিয়ে বললাম—কলসীর কাণায় হাত দিয়ে জল খাও।
থলে থেকে আরও গোটাকতক বিড়ি বার করে একটা দেশালাই সমেত কলসীর পাশে রেখে আমি যখন যেতে উদ্যত হয়েছি, লোকটা বলচে—যাচ্চ নাকি?
—হ্যাঁ।
—কনে যাবা?
—বাড়ি যাবো আর কোথায় যাবো?
—মুই দুটো ভাত খাবো—
আমি রাগ করে বললাম—কোথায় পাবো ভাত? রাত ন’টার গাড়ি চলে গিয়েচে, বাঘের ভয়, আমি বাড়ি যাবো কি করে? এখনো এককোশ পথ। আমি চললাম—
—শোনো, ওগো শোনো— —মোর কাছে বসবা না?
—আমার কাজকর্ম নেই তো, বসি তোমার কাছে এখন! কি ঝকমারি যে আজ আমি করিচি! এর পর থেকে আর কোন্ শালা—
লোকটা কাঁপতে কাঁপতে বললে—মোর বড্ড শীত নেগেচে—
বিবেচনা করে দেখলাম তা লাগতে পারে। আমারই হাড় কাঁপিয়ে দিচ্চে কনকনে উত্তুরে কলাই-ওড়ানো হাওয়ায়! আগুন করে দিই শুকনো ডালপালা দিয়ে ওর কাছ থেকে একটু দূরে।
৪০