বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তার নম্রভাব ও আগ্রহের সুরে মনে হোল জিজ্ঞাসু শিষ্যা যেন পরমজ্ঞানী গুরুর কাছে ব্রহ্মবিদ্যা শুনতে চাইচে।

 আমার হাসি পেল। প্রথমটা কিন্তু চমকে উঠেছিলাম।

 তা পরিবেশটি মন্দ নয়। আমার সামনে কালকের ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’। যুদ্ধের খবর পড়চি। জিনিসপত্রের দাম-দস্তুর ক্রমেই বাড়চে। রাশিয়া হেরে যাচ্চে, হিট্‌লারের দুর্মদ বাহিনী লেনিনগ্রাডের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেল। চা খাচ্চি। তামাক ধরাবো একটু পরেই। আর ভাবচি, কাল ডাকঘর থেকে কিছু টাকা না তুললে হাট বাজার হবে না।

 এমন সময় সাবেকদিনের কুচরিত্রা স্ত্রীলোক গিরিবালা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করছে কি? না, ব্রহ্মের কথা। তাই না হয় বাপু জিগ্যেস কর দেশের খবর, আজকালকার খবর। যেমন গদাই পাড়ুই আমাকে মাছ দিতে এসে জিজ্ঞেস করে—দাদাঠাকুর, যুদ্ধির খবরটা কি?

 মনে মনে চটে যাই। সে খবরে তোর কি দরকার? জার্মানি কোথায়, হিট্‌লার কে, জানিস্ এ সব? ইউরোপের ইতিহাস পড়েচিস? তবে যুদ্ধের খবরের তুই বাপু কি বুঝবি?

 গদাই পাড়ুই তবু পদে ছিল। যুদ্ধের খবর জিজ্ঞাসা করা এমন কিছু আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। সে আজকাল সবাই করে থাকে। কিন্তু এ বলে কি? আর ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা করবার উপযুক্ত গুরুও কি সে খুঁজে খুঁজে বার করেচে!

 প্রশ্নটা চাপা দেবার জন্যে বললাম—তুমি আজকাল থাকো কোথায়?

 গিরিবালা বৈষ্ণবোচিত দীনতার সঙ্গে বললে—বাবা, আজকাল আশ্রম করেচি বাজারের পেছনে। গোয়াঙ্গাপাড়ার মুড়োয় যে বটগাছ, ওরই উত্তর গায়ে।

 ব্যাপারটা ঘোরালো হয়ে উঠচে ক্রমশঃ। গিরিবালা আশ্রম

৪৪