বললাম—তারপর?
—তারপর বাবা সেই পাথরের বিগ্রহ আমার কাছে তো এসে ঠেলে উঠল। আঁকড়ে আমায় রইল কি বাবা, কোথাও যেতে চায় না! আমারও বাবা সেই যে বলেচে চৈতন্য চরিতামৃতে—নিজেরে পালক ভাবে, কৃষ্ণে পাল্য জ্ঞান—‘আমারও’ হোল তাই। খাওয়া-নাওয়া চুলোয় গেল। গোপাল আমার কি খাবে, গোপাল আমার কি নেবে, এখনো তাই। সেই গোপাল ঘাড়ে চেপে আছে, আর নামতে চায় না। এখানে আমার আশ্রমে তাকেই তো পিরতিষ্ঠে করে তাকে নিয়েই আছি।
—বল কি?
—কি বলবো বাবা, পুজো করতে দেয় না। বলে, তুমি যে আমার মা। মা হয়ে ছেলেকে পুজো করতে আছে! হাত চেপে ধরে। স্বপ্ন দিইছিল রাত্তিরি। ওর জন্যি ভাত রাঁধতে হবে। আর কোন দেবদেবী আমি জানিনে বাবা ঠাকুর। গোপালই আমার সব। গোপালই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। আর কিছু মানিনে।
গিরিবালা অবাকই করেচে আমাকে। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারিনে।
ও খেয়ে-দেয়ে সেদিন চলে গেল। আমার স্ত্রী খুব যত্ন করেই খাওয়ালেন ওকে। যাবার সময় ও বার বার বলে গেল—সামনের পুর্ণিমের দিন বাবা আমার আশ্রমে ঠিক যাবেন। দেবেন পায়ের ধুলো! বিকেলের দিকি যাবেন।
গেলাম ওর আশ্রমে পূর্ণিমার দিন বিকেলে। ওদের গ্রামের গোয়ালপাড়ার পেছনে খামারকালনা বলে সেকালের গ্রাম। সে গ্রাম এখন জনশূন্য। বড় বড় ভিটে জঙ্গল হয়ে পড়ে আছে। দিনমানে বাঘ বেরোয় খামারকালনায়, বরাবর শুনে এসেছি। সেই খামারকালনার নির্জন বনের প্রান্তে এক প্রাচীন বটতলায় তিন চারখানা খড়ের ঘর। বটের মোটা সরু ঝুরি নেমে এসেচে
৫২