চালা ঘরের মটকায়। সন্ধ্যামালতী ফুল ফুটেছে আশ্রমের আঙিনায়। বনে জঙ্গলে পাখীর দল কিচির মিচির করছে। ঘন বিকেলের ছায়া দেখে মনে হয় রোদ বুঝি এদিকের ত্রিসীমানায় কোনদিন ছিল না।
অনেক মেয়ে-পুরুষ দেখলাম ওর আশ্রমে। উঠোনের মাটিতে বটগাছের ছায়ায় বসে তামাক খাচ্ছে পুরুষেরা, মেয়েরা পটল আর লাল ডাঁটা কুটচে রাশীকৃত। আধমণটাক লাল মোটা আউশ চাল ধুচ্চে দুজন মেয়েতে। আজ নাকি ওরা সবাই এখানে খাবে। প্রতি পূর্ণিমাতেই নাকি এমন হয়। গিরিবালা আমায় পূর্ণিমার দিন আসতে বলেছিল কেন, এখন বুঝলাম!
সন্ধ্যার আগে খোল বাজিয়ে কীর্তন শুরু করলে পুরুষেরা। আরো রবাহুত অনেক পথ-চলতি লোক এসে জুটলো। জঙ্গলের দূর প্রান্তে গাছের ওপরকার আকাশ জ্যোৎস্নায় সাদা দেখাচ্ছিল। এরা সবাই আশপাশের গ্রামের চাষী, গোপ, কাপালী প্রভৃতি শ্রেণীর নরনারী। সবাই মিলে বেশ আমোদ করচে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। রাত্রে ওরাই রাঁধলে, বড় বড় আঙট কলার পাতা পেতে আউশ চালের ভাত আর লাল ডাঁটার চচ্চড়ি। সোনা হেন মুখ করে খেল! যে যখন আসে, আগে দেখি গিরিবালাকে সাষ্টাঙ্গে পরম ভক্তিভরে প্রণাম করে দুহাতে পায়ের ধুলো নিয়ে মাথায় মুখে দেয়।
আমি অবিশ্যি ওর ওখানে মচ্ছবের প্রসাদ পাইনি। গিরিবালা আমায় খুব যত্ন করে বসালো দাওয়ায়। আমি বললাম—না, আমি গাছতলায় বসি, বেশ লাগচে তোমার এই জায়গাটা, এত বন আছে খামারকালনায় আমার জানা ছিল না।
আমায় বললে—একটু কিছু সেবা না করে যেতে পারবেন না বাবা।
—ভাত আমি খাবো না।
৫৩