গফুর পিয়ন বড় ভালো লোক। আমাদের এখানে গফুর অনেকদিন আছে, সকলের সঙ্গেই আত্মীয়তা ওর। বাড়িতে ডেকে ওকে জল খাবার খাওয়ায়। কাঁটালের সময় কাঁটাল, আমের সময় আম, তালের বড়ার সময় ঝোলা গুড় আর তালের বড়া। বললাম— গফুর কি পাকিস্তানে চলে যাবে?
—হ্যাঁ বাবু, আমাকে যশোরে বদলি করেচে।
—সত্যি গফুর, তুমি পাকিস্তানে গেলে আমাদের সকলেরই মনে বড় দুঃখ হবে। গফুর বিনীত হাস্যে বললে—বাবু, আমারও মনডা কি ভাল থাকবে? আপনাদের এখানে যে রকম কাটিয়ে গেলাম, এমন সোনার চোখে আমাকে অপর জায়গায় কি দেখবে?
—সকলেই দেখবে। যে ভালো হয় তাকে সকলেই ভালো বলে, বুঝলে না গফুর। গফুর আমার হাতে একখানা চিঠি দিয়ে বললে—বাবুর আজ মোটে একখানা।
গফুর চিঠি দিয়ে চলেই যাচ্ছিল, আমি বললাম—যাবার আগে একটু দেখা করে জল মুখে দিয়ে যেও। সামান্য একটু মিষ্টিমুখ—
গফুর হেসে চলে গেল।
তারপর চিঠিখানার দিকে চেয়ে বিস্মিত হলাম। কাঁচা মেয়েলি হাতের লেখায় চিঠিখানা লেখা—পরমারাধ্য শ্রীযুক্ত জগদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীচরণকমলেষু—
কে চিঠি লিখেছে? খামখানা এত ময়লা আর পুরোনো আর অন্য রকমের। এ আবার কি রকমের খাম—আজকালের খামের মত নয়।
কোনো ভক্ত পাঠিকার চিঠি নাকি?
খুলেই ফেলা যাক।
আশ্চর্য! এ কার চিঠি!
৬০