বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খেলা তরণি বেয়ে চলো নাহি বেলা। সুখ যদি না পাও যাও সুখেরি সন্ধানে। কিছু নাহি চাবো গো আমি তোমার বিহনে। তোমাতে করিব বাস দীরঘ দিবস মাস। এই সব গান শিখিয়াছি। তুমি এলে চিলের কোঠায় দুপুরে দু’জনে বসিয়া গাহিয়া শুনাবো। রাণি দিদি ঠাট্টা করে বলিয়া আমার গান গাহিতে লজ্জা করে। যাহোক, এবার ঠিক গান গাহিয়া শোনাবো। আমায় আর কষ্ট দিও না, ওগো অত নিদয় হয়ে দাসিরে চরণে ঠেলিও না। আমার প্রণাম নিও। ইতি তোমার শ্রীচরণের দাসি—

নিরুপমা
তাং ২২শে ফাল্গুন, ১৩২৪ সন।
কুল বেড়িয়া। জেলা নদীয়া।

 ভাল বুঝতে পারলাম না। বানান ভুল, ভাষা ভুল, ছেদচিহ্নহীন এ চিঠিখানা কার? নিরুপমা? কে নিরুপমা?

 পত্রখানি মনে এক অপূর্ব ভাব এনে দিল। কতদিন আগেকার বিস্মৃত প্রথম যৌবনের সুবাসভরা দিনগুলির বাতাসে মেশানো ছিল যে পিককুলের রসিকতা, নব বসন্তের পত্রশোভা, দায়িত্বহীন জীবনের নিশ্চিত আয়াস, মোহমদির দিগন্ত, অপরূপ মাধুরী এতকাল পরে আবার ফিরিয়ে আনল চিঠিখানা।

 তবুও বুঝতে পারলাম না কার এ চিঠি। গত ২৪ সালের চিঠি এল গত ৫৪ সালের ভাদ্র মাসে। আচ্ছা এও কি সম্ভব? আমার এতকাল আগেকার পরলোকগতা স্ত্রী নিরুপমার চিঠি এল আজ ত্রিশ বছর পরে?

 এতকাল এ চিঠি কোথায় ছিল? কোন ডাকঘরের কোন্ আলমারির অন্ধকার কোণে আত্মগোপন করে ছিল সুদীর্ঘ ত্রিশটি বছর? আমার যৌবন বয়সের চিঠি এল যখন আজ আমি প্রৌঢ়ত্বে

৬২