—না বাবু, সেখানে আজ গঙ্গা আসেন।
—কে বললে?
—সেখানে এক বুনো সাধু আছে, তাকে মা স্বপ্ন দিয়েছিলেন। আজ দুবার হোল মাঘীপূর্ণিমের দিন গঙ্গা সেখানে আসবেন। মা বললেন, গরীব দুঃখী লোক, যারা নবদ্বীপে বা গৌরনগরে পয়সা খরচ করে যেতে পারেন না—তাদের উদ্ধার করবার জন্যে ঐ মড়িঘাটাতে তিনি আসবেন একদিনের জন্যে। সব গরীব দুঃখী লোক সেখানে যায় আজ দু’বছর ধরে। মস্ত মেলা বসে। যান না আপনি!
কথাটা লাগলো ভালো। গঙ্গাস্নানে উদ্ধার হবার বাসনা যত থাক না থাক, অনেক লোক যেখানে এসে জোটে পুণ্য অর্জনের আশায়, সে স্থানের অসাধারণত্ব অনস্বীকার্য।
অক্রূর মাঝির নৌকো ভাড়া করে সবাই মিলে রওনা হন মড়িঘাটার দিকে। আমাদের পাড়ার অনেক ছেলেমেয়ে আমাদের সঙ্গে চলেচে মেলা দেখতে। যেখানে মাঠে কুল পেকেচে, সেখানেই তারা নৌকো লাগাবে ডাঙ্গায়, হৈ হৈ করে কুল পাড়তে ছুটবে, ছোলাক্ষেতে ঘুঘু মারবার চেষ্টা করবে গুলতি ছুঁড়ে, ছোলার ফল তুলবে। প্রথম বসন্তে মাঠে মাঠে ঘেঁটুফুল, বড় শিমুল গাছে শিমুল ফুলের মেলা, কোকিল ডাকচে, জলপিপি চরচে শেওলার দামে, বাতাসে ঘেঁটুফুলের তেতো গন্ধ আর শুকনো কষাড় ঝোপের গন্ধ ভেসে আসচে।
মড়িঘাটা পৌঁছুতে বেলা বারোটা বেজে গেল।
দূর থেকে একটি কোলাহল কানে গেল। বহুলোকের সমাগম হয়েছে বটে। আমাদের নৌকো ভিড়লো একটা প্রাচীন বটবৃক্ষের ছায়ায়—সেখানে আমাদের মত অমন কত নৌকো ভিড়েচে। বটতলায় কত লোক রান্না করে খাচ্ছে। মেয়েদের ভিড় বটতলার ওপাশের ঘাটে—সেখানে সবাই স্নান করচে, গঙ্গা নাকি মাত্র সেই জায়গাটুকুতেই আসবার অঙ্গীকার করেছিলেন সেই বুনো সাধুর কাছে। সুতরাং
৬৫