বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেখানেই ভিড় করেচে স্নানার্থীরা, তার এক হাত এদিকও নয়, এক ফুট ওদিকও নয়।

 অক্রূর মাঝি বললে—মেয়েদের নিয়ে এপারের ভিড়ে কষ্ট হবে। চলুন ওপারে। ওপারে সেই বুনো সাধুর আখড়া। আপনি গেলি জায়গা দেবে। ওই দেখা যাচ্চে তেনার আখড়া। ওপারে রান্না করে খাওয়ার জায়গা হবে খন। নইলি এপারে কনে বা কাঠ কনে বা উনুন—

 মেয়েরা বললেন আগে তাঁরা মেলা বেড়িয়ে দেখবেন।

 মেলা বেড়াতে গেলেন মেয়েরা। আমিও সঙ্গে আছি। তেলেভাজা বেগুনি ফুলুরির দোকান, খেল্‌নার দোকান, ঘুন্‌সি ফিতে চিরুনির দোকান, চায়ের দোকান। ভিড় বেশী লেগেছে তেলেভাজা খাবারের দোকানে আর তার চেয়েও ভিড় চায়ের দোকানে।

 পাড়াগাঁয়ে চায়ের দোকানে ভিড় বেশী হয়। এখানে যারা এসেচে, এদের মধ্যে চা অনেকেই বাপের জন্মে খায়নি। শৌখীন জিনিস হিসেবে অনেকেই এক পেয়ালা কিনে চেখে দেখছে। বুনো, কাওরা, মালো, ডোম, বাগদি, মুসলমানদের ভিড় বেশী এ সব মেলায়। হ্যাঁ, মুসলমানদেরও। তাদের মেয়েদের উৎসাহ কোনো অংশে কম নয়। ‘গঙ্গা’স্নান তারা অবিশ্যি করে না, কিন্তু মেলা দেখতে আসে ও জিনিসপত্তর কেনে।

 চায়ের দোকানের ভিড়ের মধ্যে দেখি মা অনিচ্ছুক ছোটছেলের মুখের কাছে চায়ের ভাঁড় ধরে বলচে—খেয়ে নে, অমন করবি তো—এরে বলে চা—ভারি মিষ্টি—দ্যাখো খেয়ে—ওষুধ—জ্বর আর হবে না—আ মোলো যা ছেলে। চার পয়সা দিয়ে কিনে এখন আমি ফেলে দেবো ক’নে? মুই তো দু ভাঁড় খ্যালাম দেখ্‌লি নে? খা—

 সরলা পল্লীবধূদের ঠকিয়ে মহকুমা শহরের ঘুঘু দোকানদার অবিনাশ মোড়ল মণিহারি জিনিস বিক্রি করচে।

 এরে বলে ‘সোহাগী’ সাবান! গরম জল করে মেখে দ্যাখো না

৬৬