নিয়ে গিয়ে। ভুর ভুর করবে গায়ে গন্ধ! চুলকুনি সেরে যাবে ছেলেদের। সাড়ে ন’ আনা দাম, তা তোমাদের কাছে আলাদা কথা, দুটো পয়সা কম দিও! দাও পয়সা—বাবু যে! ভালো আছেন? মাদের এনেচেন বুঝি? বেশ বেশ। প্রাতোপেন্নাম। একটা সিগারেট খান—আসুন—আচ্ছা, পেন্নাম হই—আসবেন তাহলে এরপর দয়া করে। রান্নাবান্না করবেন ওপারে? সেই ভালো— এপারে সত্যিক জাতের ভিড়—
কিন্তু কি চমৎকার লাগে এদের আমোদ, উৎসাহ, ফুর্তি। বছরে একদিন মেলা, এমন উৎসব আসে—ওদের জীবনে। আর সব দিন এরা বেগুন পোঁতে, ধান মাড়ে, কলাই মাড়ে, হলুদ শুকোয়। আজ এসেচে ছেলেমেয়ের হাত ধরে মেলা বেড়াতে। খাবে না চা, কিনবে ‘সোহাগী’ সাবান?
নদীর ধারে লোকেরা রেঁধে খাচ্চে। সবাই কিনচে নূতন হাঁড়ি, মাছ ও আলু। আমার বেশী ভাল লাগে দেখতে লোকে কি খায়। বেশীর ভাগ লোকে রেঁধেচে মাছের ঝোল আর ভাত। আলু ও বেগুন কুটে দিচ্চে ঝোলে। আলু ভাতে, বেগুন তাতে মাখচে নুনতেল দিয়ে, যাদের ভাত হয়ে গিয়েচে। কপি বিক্রি হচ্চে চড়া দামে। এ অঞ্চলে কপির চাষ নেই, ওটা শৌখীন শহুরে আনাজ বলে গণ্য। কপি সবাই কেনেনি, যারা কিনেচে তারা অনেকে রেখে দিয়েচে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পাঁচজনকে দেখিয়ে খাবে। খুব গরীব যারা তারা রাঁধচে শুধু আলু বা মানকচু ভাতে ভাত। একটি মা ও ছেলে একটা আঙট কলার পাতে একত্রে খেতে বসেচে, মোটা লাল আউশ চালের ভাত একরাশ, তার সঙ্গে ছোট্ট এতটুকু আলু ভাতে। তার পাশেই একদল বড় বড় কই মাছ ভাজচে দেখে ছোট ছেলেটা বলচে দ্যাখ্ মা কত বড় মাছ? কই মাছ খাবো মা—
চুপ কর। ওদিকে তাকাতে নেই—খেয়ে নাও—নংকা খাবি? নংকা মেখে দেবো? একজন কুলের অম্বল সাঁতলাচ্ছে ওপাশে।
৬৭